শুভ’র সিনেমার সমালোচনায় শাকিবপন্থী নির্মাতা ও ভক্তরা

সিনেমা, বিনোদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 20:24:03

চলতি বছরে এই পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া সিনেমার সংখ্যা ২৪টি। এই পরিসংখ্যান ধরে বলা হয়ে থাকে, বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান প্রযোজিত ও অভিনীত ‘পাসওয়ার্ড’। রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি ভালোই দর্শক টেনেছিলো বলে জানা যায়।

এর বাইরে চলতি বছর দেশ সেরা নায়ক শাকিব খানের ‘নোলক’ ও ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ শিরোনামের আরও দুইটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সেগুলো ব্যবসাসফল তো দূরের কথা আলোচনাতেই আসেনি। কারণ সিনেমা দুইটির প্রচারণায় অংশ নেননি শাকিব খান। এর ফলে শাকিব খানের সিনেমা তার নামে চলে এই প্রচলিত বক্তব্যটি দুইটি সিনেমার মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হয়েছে চলতি বছরে।

শাকিব খান

এদিকে এ বছরে মাত্র একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে দেশের আরেক চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ’র। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ১৫ টি ও সারা দেশের মোট ৪২টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে আরিফিন শুভ ও বিদ্যা সিনহা মিম অভিনীত বছরের অন্যতম আলোচিত সিনেমা ‘সাপলুডু’।

‘সাপলুডু’ মুক্তির পরই সিনেমাটির গল্প ও নির্মাণ সবকিছু মিলিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। দর্শক সিনেমাটি দেখে তাদের ভালো লাগা ও মন্দ লাগার কথা প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে বেশিরভাগই সিনেমার ভালো দিকগুলোকে তুলে আনছেন। প্রশংসা করছেন শুভসহ ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতাদের অভিনয়ের।

সাপলুডু

তবে ফেসবুকে শুধুই ব্যতিক্রম শাকিবপন্থী নির্মাতা ও ভক্তরা। বছরে একটি দিয়েই বাজিমাত করে চলা আরিফিন শুভ’র সিনেমা নিয়ে হঠাৎ করে সরব হয়ে পড়েছেন শাকিব খানের ভক্তরা। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ঘুরে দেখা যাচ্ছে, তারা ফেসবুকে সিনেমাটিকে নানাভাবে কথার বাণে জর্জরিত করছেন। তবে শুভ ভক্তদের দাবি, সিনেমা না দেখেই শুধু ব্যক্তি আক্রোশে অনেকেই সিনেমাকে বাজে বলে মন্তব্য করছেন।

এদিকে শুধু ভক্ত নয়, আরিফিন শুভ’র ‘সাপলুডু’ সিনেমা নিয়ে আক্রমণে যোগ দিয়েছেন শাকিবপন্থী দুই নির্মাতাও। তারা হলেন বিভিন্ন সময় অসংলগ্ন মন্তব্য করে আলোচনায় থাকতে চাওয়া পরিচালক মালেক আফসারী ও নানা ইস্যুতে বিতর্কিত পরিচালক শামীম আহমেদ রনি।

সম্প্রতি নিজেদের ফেসবুকে সরাসরি ও ইশারায় ‘সাপলুডু’ সিনেমা ও সিনেমাটির নায়কের নাম নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে এই দুই পরিচালকে। আর সেগুলো নিয়ে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে শাকিব ভক্তরা ‘সাপলুডু’ সিনেমার সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

আরিফিন শুভ’র এক বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে শাকিব খানের আপকামিং ‘শাহেন শাহ’ সিনেমার পরিচালক শামীম আহমেদ রনি নিউজের ফেসবুকে অত্যন্ত নিম্ম ভাষায় ‘সাপলুডু’ সিনেমার সমালোচনা করেছেন। যেটি ঢাকাই সিনেমার একজন পরিচালক হয়ে দেশের একটি সিনেমা নিয়ে এমন মন্তব্য কাম্য নয় বলে মনে করছেন ঢাকাই সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

রনি

ঢাকাই সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির কাছে রনির এমন মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ‘সিনেমার মানুষ হয়ে অন্য সিনেমা নিয়ে এমন মন্তব্য আশা করা যায় না। শাকিবের সিনেমা এলে সেটা নিয়ে সবাই পজিটিভ থাকি যাতে দর্শক হলে আসেন। এটা সবার বেলাতেই হওয়া উচিত। আমাদের ধারণা রনি আলোচনায় থাকতে এমনটি করেছেন। ঢাকাই সিনেমার এখন খারাপ সময় যাচ্ছে। এখন নিজেদের মধ্যে ঝামেলা না করে সবাই মিলে সিনেমার ভালোর জন্য কাজ করতে হবে।’

নিজেদের দেশের একটি সিনেমা নিয়ে এমন মন্তব্যের পর রনির বর্তমান প্রতিক্রিয়া জানতে রনির যোগাযোগ করা হলে সাড়া তার পাওয়া যায়নি।

মালেক

অন্যদিকে শাকিব খানের সিনেমার অন্য পরিচালক মালেক আফসারিও ‘সাপলুডু’র সঙ্গে নিজের ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমার তুলনা করে একটি নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন সামাজিক যোগাযোগ যোগাযোগ মাধ্যমে। তার এমন মন্তব্য নিয়ে বর্তমান অবস্থান জানতে তার মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঢাকাই সিনেমার এমন খারাপ পরিস্থিতি একটি সিনেমা ভাল করলে বা আলোচনায় আসলে অন্য সিনেমার পরিচালকরা বা অন্য নায়কের ভক্তরা কেন সেই সিনেমার বিরোধিতা করেছেন? এই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে বারবার। এর আগেও অন্য কোনো নায়কের সিনেমা আলোচনায় এলেই শাকিব ভক্ত ও তার সমর্থকরা সেইসব সিনেমার সমালোচনায় মেতে উঠেন। এর আগে শুভ’র ঢাকা অ্যাটাক সিনেমা মুক্তি পরও এমনটি দেখা গিয়েছিল। সিয়ামের বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তির পরও শাকিব ভক্তদের এমন অবস্থানে দেখা গিয়েছিল।

আরিফিন শুভ

যদিও এই প্রসঙ্গে শাকিব খানকে কখনো কোন মন্তব্য বা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তবে এটাও দেখা গেছে, শাকিব যে সিনেমার জন্য নিজে শুভেচ্ছা বার্তা দেন সেই সিনেমা ভালো না হলেও তার প্রশংসায় মেতে থাকেন শাকিব ভক্তরা।

ঢাকাই সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ভাল সিনেমার জন্য যতদিন আমরা এক না হতে পারবো, ততোদিন আমাদের সিনেমার উন্নয়ন হবে না। ব্যক্তি নায়ক ভক্ত না হয়ে প্রকৃত ঢাকাই সিনেমার ভক্ত হতে পারলেই বদলে যাবে আমাদের সিনেমা। পাশের দেশে গুলোতে এই ধরনের এক নায়ক চর্চা নেই বলেই সবার সিনেমা চলে। আমাদেরও তেমন হওয়া উচিত। ব্যক্তি নায়ক ভক্ত না হয়ে, ভাল সিনেমার ভক্ত হতে হবে সবার আগে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর