কেবল দশ-বারো বছর বয়স বাংলাদেশে এফএম রেডিওর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারাও পাল্টে যাচ্ছে, রূপ বদলাচ্ছে অনুষ্ঠানের। শ্রোতা চাহিদার কথা মাথায় রেখে স্টেশনগুলো দিনকে দিন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের নিত্যকর্ম। ফেসবুকেও ইদানিং দেখা যায় বিভিন্ন এফএম রেডিওর নিয়মিত লাইভ অনুষ্ঠান। আগে যেটা কেবল কানে শোনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো।
রেডিওর আরজেরা মিডিয়ার অন্য সব মাধ্যমের সুবিধা নিয়ে শ্রোতাদের সঙ্গে আরও বেশি কানেক্টেড হওয়ার চেষ্টা করছে; সেটা ফেসবুক লাইভ হোক, বা অন্য কোনো উপায়ে হোক। এটা তাদের দায়বদ্ধতা থেকেই করছে। তারা ভিডিওতে এসেও তাদের ওই কথাগুলোই বলছে, বিভিন্ন সামাজিক ব্যাপারগুলো তুলে ধরছে; যেগুলো রেডিওতে বলে। ফলে শ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন আরও সহজতর হচ্ছে। শ্রোতাদের এখন আর অনেক টাকা খরচ করে টেক্সট পাঠাতে হচ্ছে না। যা বলার তা কমেন্টবক্সে লিখে দিলেই হচ্ছে।
আমার মনে হয় না। রেডিও রেডিওর মতোই চলছে। কারণ, রেডিও স্টুডিও থেকেও যেই ফেসবুক লাইভটা হচ্ছে, সেটার জন্যও কিন্তু কিচ্ছু পাল্টাচ্ছে না, নতুন করে সেট করা হচ্ছে না টেলিভিশনের মতো। এমনকী ফেসবুক লাইভে পুরো শো’টাও দেখানো হচ্ছে না সাধারণত, একটা নির্দিষ্ট অংশ দেখানো হচ্ছে। বাকিটা ওই কান পেতেই শুনতে হচ্ছে সবাইকে।
মোটেও না। শুধু উপায় বদলেছে। আগে যেমন টেক্সট-এর পর টেক্সট করে যেতো তারা, পড়ার আগ পর্যন্ত। এখন কমেন্টের পর কমেন্ট করে যায়, যেহেতু প্রায় প্রত্যেকের হাতেই স্মার্টফোন আছে; যেটা পাঁচ-সাত বছর আগেও এতোটা এভেইলেবল ছিলো না। এখন বরং আরজেকে সরাসরি দেখে তারা আরও বেশি চাচ্ছে যে কমেন্টটা পড়া হোক বা যেটা বলতে চাচ্ছে সেটা শোনা হোক। এমনকী তারা কমেন্টে তাদের ফোন নাম্বার পর্যন্ত দিয়ে দিচ্ছে যেনো কল করা হয়।
হা হা হা। অনেকেই অফিস পর্যন্ত চলে আসতো তখন। এখন আর সেটা হয় না। সময় পাল্টেছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক দ্রুত স্মার্ট হচ্ছে। তারা সব বিষয়ে একটা পাগলাটে ব্যাপার করে ফেলবে, এটা আশা করা যায় না। এমনকী সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তারা এখন বেশ পরিপক্ক। প্রেমময় গল্প-টল্প নিয়ে আগে যতো বেশি অনুষ্ঠান হতো রেডিওতে, এখন কিন্তু সেই ব্যাপারটায় ভাটা পড়েছে। বরং এখন ক্যারিয়ার সংশ্লিষ্ট অথবা আইটি বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো বেশি জমজমাট হচ্ছে। এখন এই টেক্সট পর্যন্ত চলে আসে যে, ভাই আমি কোন গাড়িটা কিনবো অথবা কোন মডেলের ক্যামেরাটা কিনলে ভালো হবে ইত্যাদি।
এইজন্যই আরজেকে অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয়। মাথায় যদি কিছু না থাকে, বলবে কী সে তাহলে! কারেন্ট ইস্যু থেকে শুরু করে অন্যান্য সব বিষয়গুলোও তার জেনে রাখতে হয়। এমনকী একটা গান বাজানোর আগে ওই গানের সমস্ত তথ্যও তার শেয়ার করতে হয় শ্রোতাদের সঙ্গে।
রেডিও খুব ভালো শেখার যায়গা। টেলিভিশনকে যেহেতু একটু ওয়াইড অ্যাংগেল থেকে চিন্তা করে মানুষ, সেখানে ইনভল্বমেন্টটাও বেশি, সম্মান এবং সম্মানিটাও বেশি; ফলে অনেকেই যায় সেখানে সুযোগ পেলেই। যারাই যায়, তারা যদি ফিরেও না আসে কখনও; রেডিওটাকেই কিন্তু ধারণ করে এবং মিস করে। নুসরাত ফারিয়া, নওশীন এদের উদাহরণ দিয়ে দেয়া যায় এখানে।
পেছনে থেকে উপস্থাপনার চ্যালেঞ্জটা বেশি। কারণ, রেডিও আরজেদের সবসময় অভিনয়ের মধ্যেই থাকতে হয়। একজন আরজে একা একা বসে কথা বলছে, অথচ তাকে শুনলে মনে হয় যে তার সঙ্গে হাজারো মানুষ। এই অভিনয়টা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। ফলে তারা যখন টিভিতে আসে উপস্থাপনার জন্য, বেশ সুবিধে হয়। শুধু কিছু টেকনিক্যাল বিষয় শিখে নিলেই হলো।
বাজার বড় হয়েছে, এটা একটা বিষয়। প্রথম প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো বেশি। নতুন একটা ধারা, মানুষ নেবে কিনা! এসব বিষয় আর কী। শুরুতে রেডিও টুডে, রেডিও আমার, এবিসি রেডিও সহ যারা এসেছে; এই দেশে সামনে রাখার মতো কিন্তু তাদের কেউ ছিলো না। এই চ্যালেঞ্জে যখন তারা টিকে গেলো, অন্তত বিজ্ঞাপনের টাকা থেকে সবাইকে বেতন দিতে পারা শুরু করলো; বাড়তে থাকলো একটার পর একটা স্টেশন। এখন তো প্রায় বিশটার মতো রেডিও স্টেশন চলছে।
ওভারঅল আমাদের মিডিয়ার অবস্থাই তো ভালো না। এই ছোট্ট দেশে এতো বেশি মিডিয়া হাউজ হয়ে গেছে যে, ইনভেস্টররা কোন যায়গায় বা কয়টা যায়গায় ইনভেস্ট করবে! বড় বড় কম্পানিগুলো আবার নিজেরাই রেডিও, টেলিভিশন বা পত্রিকা খুলে বসে আছে। তাদের বড় ইনভেস্টটা কিন্তু নিজেদের যায়গায়ই করছে। অন্য লাইনের বিজনেস ম্যাগনেট যারা, দুয়েকজন ছাড়া; তারাও দেখি বিনোদন ব্যবসা খুলে বসে আছে। বিনোদন যে দিনশেষে আসলে একটা ব্যবসা না, অন্য জিনিস; এটা কে বুঝবে!
কয়েকটা গানের মিউজিক ভিডিও করবো। এছাড়া আরও কিছু কাজ নিয়ে আগাচ্ছি।
আরও পড়ুনঃ