মিল্কি ওয়ের সবচেয়ে বিশদ থ্রিডি ম্যাপ উন্মোচিত

, ফিচার

শুভ্রনীল সাগর, স্পেশালিস্ট রাইটার, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 21:39:41

বিপুলা এ বিশ্ব যেমন বিস্তৃত-বিস্ময়, তেমনই অধরা। তবু বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা থেমে নেই। অতি সম্প্রতি চির রহস্যময় মহাশূন্য ও ছায়াপথ গবেষণায় যুক্ত হলো নতুন মাইলফলক! জোতির্বিজ্ঞানীরা এখন অব্দি মিল্কি ওয়ের সবচেয়ে সুনির্দিষ্ট ও বিশদ থ্রিডি ম্যাপ উন্মোচন করেছে।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) গাইয়া অবজারভেটরি ২০১৩ সাল থেকেই ফ্রেঞ্চ গায়ানার কৌরৌতে গ্যালাক্সি স্ক্যানিং করে আসছিল। গত প্রায় সাত বছরের ডেটা এক জায়গায় করে বানানো হয়েছে এই সুবিশাল ইলেক্ট্রনিক থ্রিডি মানচিত্র। সোলার সিস্টেমের ত্বরণ ও গ্যালাক্সির ভর মাপতে পর‌্যাপ্ত তথ্য জোতির্বিজ্ঞানীরা এই ম্যাপ থেকে পাবেন। সৌরজগত সৃষ্টি রহস্য ও সৃষ্টির শুরুর সময় থেকে মহাবিশ্ব কী হারে সম্প্রসারিত হয়েছে জানা যাবে তাও।

ক্যামব্রিজের ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমির ইএসএ গাইয়া সায়েন্স টিমের সদস্য নিকোলাস ওয়াল্টন বলেন, আমরা এখানে যেটা করছি সেটা হলো, আমারদের নিকটবর্তী কয়েকশো আলোকবর্ষ মহাশূন্যের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ থ্রিডি ম্যাপ।

থ্রিডি ম্যাপে লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড (বামে) ও স্মল ম্যাগেলানিক ক্লাউড (ডানে)

গার্ডিয়ানে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নক্ষত্রদের অবস্থান ও গতিবিধি তালিকাভুক্ত করার মধ্য দিয়ে মানচিত্রটি মূলত মিল্কি ওয়ের পেছনের ধ্বংসাত্বক প্রক্রিয়াগুলো সামনে নিয়ে এলো। সৌরজগতের নিকটবর্তী দুই গ্যালাক্সির মাঝখানের তারাদের দুর্বল প্রবাহ শনাক্তকরণ এটাও প্রমাণ করে, লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড (এলএমসি) যতটা গ্রাসকারী, ততটাই সঙ্কুচিত স্মল ম্যাগেলানিক ক্লাউড (এসএমসি)।

গাইয়ার পর্যবেক্ষণ, ব্ল্যাক হোল থেকে উৎপন্ন কোয়ার্সগুলো সূযের চেয়েও কয়েক বিলিয়ন গুণ বড় ও ভারী। কোয়ার্স হলো মহাশূন্যের সবচেয়ে দূরতম ও তীব্র উজ্বল বস্তু। সৌরজগতের গতিবিধি পরিমাপ করে দেখা গেছে, প্রতিবছর সেকেন্ডে প্রায় সাত মিলিমিটার ত্বরণে সৌরজগত মিল্কি ওয়ের কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

গ্যালাক্সি সারভেয়র নামে পরিচিত ‘গাইয়া’ মহাকর্ষীয়ভাবে একটি স্থিতিশীল অবস্থান ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট থেকে প্রদক্ষিণ করে। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট সূর্যের উল্টোদিকে পৃথিবী থেকে নয় লাখ ৩০ হাজার মাইল দূরে। গত সাত বছর ধরে বিজ্ঞানীরা নিকটবর্তী দুই বিলিয়ন নক্ষত্রের অবস্থান ও গতিবেগ পরিমাপ করেছেন। মহাজাগতিক নিঃশেষণ প্রকাশ করার পাশাপাশি এই মানচিত্র ছায়াপথের বস্তুগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে এক জায়গায় নিয়ে আসে, যেখান থেকে সহজেই এদের ভর নির্ণয় করা যায়।

সোলার সিস্টেমের ত্বরণ

মহাশূন্যে ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টগুলো হলো এমন একটি অবস্থান যেখানে মহাকর্ষ বস্তুকে নিশ্চল রেখে দেয়। এর মানে, অবস্থান ঠিক রাখতে ন্যূনতম জ্বালানির দরকার হবে গাইয়া অবজারভেটরির। এই দূরবর্তী কক্ষপথের আরেকটি সুবিধা রয়েছে। এটি পৃথিবী থেকে যথেষ্ট দূরে, কাজেই পরিষ্কারভাবে তারাদের দেখার ক্ষেত্রে আলোক দূষণ এড়ানো যায়।

এই সুবিশাল ডেটা প্রসেসিংয়ের দেখভাল করেছেন ফ্লোর ভ্যান লিউওয়েন। তিনি বলছেন, ছায়াপথের এই থ্রিডি ম্যাপটি করার মূল উদ্দেশ্য, আমাদের প্রতিবেশী নক্ষত্রগুলোকে ফরেনসিক্যালি অ্যানাইজ করার জন্য জোতির্বিজ্ঞানীদের আরও সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। যেনো আমাদের গ্যালাক্সির উৎপত্তি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর তারা খুঁজে পান।

ইউকে স্পেস এজেন্সির স্পেস সায়েন্সের প্রধান ক্যারোলিন হার্পার বলেন, হাজার বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমাদের কেবল তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে যেতে হয়েছে। তারাদের বিশদভাবে জানা ও তাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান নির্ণয়ের মধ্য দিয়ে মহাশূন্য নিয়ে মানব জাতির বোঝাপড়া আরও বিস্তৃত হলো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর