অল্পতে খেয়াল করে না মানুষ, বড় দুর্ঘটনা ছাড়া!
দুই পাশে সারি সারি মরাগাছ! দেখতে চমৎকার লাগলেও সেটি এখন যেন মরণ ফাঁদ! স্থানটি ভয়ানক হলেও তরুণ-তরুণীদের এখন ফটোশুটের একমাত্র জায়গা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে ভিড় জমে ছবি তোলার। কেউ ব্যস্ত ভিডিওশুটে, কেউ-বা রিলসে আবার কেউ সেলফি ওঠাতে।
একদিকে, যেমন বিনোদনের জায়গা, ঠিক তেমনি অন্যদিকে ভয়ানক কান্নার স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কটি।
মরা এসব গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানির ঝুঁকিও! প্রতিনিয়ত এমনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে চলাচল করতে আসা মানুষ।
সরেজমিন সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের মাইলের পর মাইল ঘুরে দেখা যায়, দুই বছর আগের সেই মরাগাছের কঙ্কালসার দেহ দাঁড়িয়ে আছে এখনো, যা ক্রমশই ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে প্রকৃতির নিয়মে! কিন্তু দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছেন সবাই।
এসব মরাগাছের ডাল আকস্মিকভাবেই ভেঙে পড়ে সড়কের ওপর। কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। এই গাছগুলো অপসারণ করা হচ্ছে না, এই নিয়ে ক্ষোভ এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে এই সড়কের দুইপাশে চারাগাছ রোপন করেন জেলা পরিষদ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
বছরখানেক আগে সড়কটির বেশকিছু স্থানের গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে শত শত গাছ মারা যায়। সামান্য ঝড় বৃষ্টিতেই গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। অনেক সময় বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ অন্যান্য যানবাহনে চলাচলকারী ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন। আমরা অনেকদিন ধরেই সংশ্লিষ্টদের বলেছি, গাছগুলো অপসারণ করতে কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি। হয়ত ‘একবারে ২-৩ জন না মরলে গাছ কাটবে না’ কর্তৃপক্ষ!
সাতক্ষীরা আশাশুনি সড়ক দিয়ে চলাচল করা বাসচালক মিজান শেখ বলেন, যখন-তখন গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ায় ঝুঁকি নিয়ে আমাদের গাড়ি চালাতে হচ্ছে! গাছ ভেঙে সড়কের ওপর পড়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যান চলাচল। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো যেন মরণফাঁদ! কবে হয়ত আমরা এই মরণফাঁদের কবলে পড়বো! আমরা শুধু বলে যাচ্ছি কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না! মানুষ অল্পতে খেয়াল করে না, বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত!
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সদস্য মাধব চন্দ্র দত্ত বার্তা২৪.কমকে বলেন, জেলা পরিষদ আর সড়ক জনপদ বিভাগকে জানাতে জানাতে আমরা ঠকে গেছি! যতবার আন্দোলন, মানবন্ধন করেছি, ততবারই আমাদের তারা আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু দিনশেষে তারা তাদের কথা রাখেননি!
মাধব চন্দ্র বলেন, আমি মনে করি, গাফেলতির কারণে তারা এই বিষয়টা নজরে নিচ্ছেন না। তারা কখনো চিন্তা করেন না, ওই এলাকার মানুষের কথা! ওই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষজন যাতায়াত করেন।
সড়কের অবস্থা ভয়াবহ উল্লেখ করে মাধব চন্দ্র আরো বলেন, এখন বর্ষার সময়। ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এই সময়ে গাছগুলো ভিজে ভারী হয়ে যাবে। যখন-তখন কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা করি। এই বিষয় অনেকবার তাদের নজরে আসলেও তারা এড়িয়ে গেছেন এবং এখনও যাচ্ছেন। আমরা চাই, শিগগিরই এই গাছগুলো অপসারণ করে আবার নতুন গাছ সেখানে রোপন করা হোক।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, গাছগুলি ঝুঁকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে, গাছগুলি মার্কিং করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে টেন্ডারের মাধ্যমে মরা গাছগুলি অপসারণ করা হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সড়কের পাশে মরা গাছগুলোর মধ্যে কিছু গাছ জেলা পরিষদের আর বাকি গাছ সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের মালিকাধীন।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা সামাজিক বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গাছগুলো মারা যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানকার একটি দল এসে কাঠ ও পোকার নমুনা নিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়, ‘লাখ্যা’ নামে এক ধরনের পোকার আক্রমণে গাছগুলো মারা গেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় গাছগুলো মারা যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ।