সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জল-পাথরের শয্যাখ্যাত বিছনাকান্দি। মেঘালয় পাহাড়ের কোলে অবস্থিত সিলেটের এই পর্যটনকেন্দ্র। এখানে আগত পর্যটকদের বেড়ানোর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করেন ৫০ জনের বেশি তরুণ আলোকচিত্রী। এদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা ভ্রমণপ্রিয় মানুষের সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করে থাকেন। রোজ ৫০০ টাকার মতো আয় হয় তাদের। এই টাকা দিয়ে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবা-মাকেও সাহায্য করে থাকেন অনেকেই।
বিছানাকান্দি টুরিজম ক্লাবের সেক্রেটারি ইসমাইল হোসেন শিমুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের অধিকাংশ ফটোগ্রাফারই শিক্ষার্থী। ছুটির দিনে ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়ের বাইরে আমরা কাজ করে থাকি। নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবা-মাকেও সাহায্য করে অনেকেই।
শিমুল সিলেটের টিলাগড় এলাকার মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়ছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। তার বাড়ি বিছানাকান্দির কাছেই হাদারপাড় গ্রামে।
শিমুল বলেন, আমরা মূলত পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটক আসলে আমাদের মনটা আনন্দে ভরে যায়! পর্যটক না আসলে আমাদের ক্যামেরা বাক্সবন্দী করে রাখতে হয়। কিছু দিন আগেও আমাদের ক্যামেরা বাক্সবন্দীই ছিলো। করোনায় বিছানাকান্দি পর্যটনকেন্দ্র বন্দ থাকায় আমাদের অনেককেই ক্যামেরা বিক্রি পর্যন্ত করতে হয়েছে।
বিছানাকান্দিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ছবি তুলছিলেন ফটোগ্রাফার আমিন আহমদ। পর্যটকদের বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল বলে দিচ্ছিলেন তিনি। ছবি তোলার এক ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। বার্তা২৪.কমকে আমিন বলেন, আমি ক্লাস সেভেন পড়ি। স্কুল বন্ধ থাকলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ছবি তুলি। দিনে ৫০০ টাকার মতো পাই। এতে আমাদের পরিবারের অনেক উপকার হয়।
আমিন বলেন, করোনার মধ্যে যখন পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ছিলো তখন আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমার আর কোনো ইনকামের সোর্স ছিলো না।
ঘুরতে আসা পর্যটক শফিকুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কে জানান, এখানে ফটোগ্রাফারেরা খুবই আন্তরিক। টাকাও খুব বেশি নেননি। ছবি প্রতি দুই টাকা দিলেই হচ্ছে।
বিছানাকান্দি পর্যটন এলাকাটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে মেঘালয় পর্বতের বিভিন্ন স্তর এসে একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে। মেঘালয় পর্বত থেকে নেমে আসা একটি ঝরনা এখানে একটি হ্রদের সৃষ্টি করেছে যা পিয়াইন নদীর সাথে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। এখানকার শিলা-পাথর গুলো একদম প্রাকৃতিক এবং এগুলো পাহাড়ি ঢলের সাথে পানির মাধ্যমে নেমে আসে। যেখানে ছোট-বড় পাথরের শয্যা পাতা! এর ওপর দিয়ে কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানি। দেহমন প্রশান্ত করতে পর্যটকেরা শরীর এলিয়ে দেন সেই শয্যায় কিংবা মেতে ওঠেন জলখেলায়। একবার শরীর এলিয়ে দিলে আর উঠতে ইচ্ছে করে না।