যশোরের ঝিকরগাছা থেকে: মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস বন্ধ থাকা এবং লকডাউনের কারণে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এ অঞ্চলের শতশত কৃষক। দেশের ফুল চাষের মোট জমির এক-চতুর্থাংশই চাষ হয় এই যশোরে। ফুল চাষ করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে তারা।
কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মহামারি করোনার কারণে এই অঞ্চলের ফুল চাষিরা লাভের মুখ দেখছে না বহুদিন। তবে, ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে আশার আলো দেখছে তারা। ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে গদখালীর ফুল চাষিরা। বিশেষ করে পহেলা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে তারা পুরো প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে যশোরের গদখালী ফুলের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শীতের প্রচণ্ড কুয়াশা ভেদ করে ভোর ৫টা থেকে শতশত ফুল চাষিরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে ক্রেতার আসায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতা আসছেন ফুল কিনতে।
বাজারের মধ্যে রং-বেরঙের নানা ধরনের ফুলের সমাহারে বাজারটি যেন লাল হয়ে গিয়েছে। এখানে সব ধরনেরই ফুল রয়েছে। কি নেই এখানে। গাঁদা থেকে শুরু করে চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, কসমস, গোলাপ, ডেইজি জিপসি, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, ডালিয়াসহ প্রায় সব রকমেরই ফুল রয়েছে। বাজারে যতদূর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল।
স্থানীয় ফুল চাষি বাকের হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, করোনার মধ্যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফুলের তেমন দাম পাইনি। এই ফেব্রুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটা জাতীয় ইস্যু রয়েছে। বিশেষ করে পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি। আশা করছি এই তিন দিবসেই ভালো লাভ হবে। আমরাও সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
যশোর কৃষি সস্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, যশোরে ৩৫টি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ৪২টি দেশি-বিদেশি জাতের ফুলের চাষ হয়। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয় এ অঞ্চলে। আর এই ফুলের চাষের সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় লক্ষাধিক কৃষক জড়িত।
সূত্রটি আরও জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কৃষকেরা ২ হাজার ২৬৪ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করেছে। যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম।
ঝিকরগাছা কৃষি অধিদফতরের কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা সব সময় পাচ্ছে ফুল চাষিরা। কৃষকদেরকেও সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।। যাতে এ অঞ্চলের কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে লাভবান হতে পারে। নজরকারা এ ফুলের উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।