কলোনি তৈরি করে রাত্রিযাপন করে ‘শামুকখোল’

, ফিচার

বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 08:01:06

জলাভূমির পাখি শামুকখোল। আজ প্রায় দুই/তিন দশক আগেও বাংলাদেশে সহজে দেখা মিলতো না। উপযুক্ত পরিবেশ, পর্যাপ্ত খাবার এবং প্রজনন সুবিধার কারণে এই পাখি এখন বাংলাদেশের আনাচে কানাচে দেখা মিলছে। সেই সঙ্গে বহুগুণ বৃদ্ধিও পেয়েছে শামুকখোলের সংখ্যা।

প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক এ পাখি প্রসঙ্গে বলেন, শামুকখোল এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার খাল, বিল এবং নদীর কাছাকাছি এলাকাগুলোতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। এরা প্রজনন শেষে আর দেশের বাইরে যাচ্ছে না। বাংলাদেশেই তারা কলোনি তৈরি করে স্থায়ীভাবে থাকছে। ফলে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে সহজেই এই পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এক সময় শামুকখোল পাখি মূলত আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন ভিজিটে আসতো। এজন্য এদেরকে ‘পরিযায়ী পাখি’ বলা হয়। এরা বাংলাদেশে তখন খুব বেশি স্থায়ীভাবে বসবাস করতো না। অল্প সংখ্যক দেখা যেতো। প্রজননের জন্য তারা অন্য দেশ থেকে আমাদের দেশে আসতো। প্রজনন শেষে তারা আবারও দেশ ত্যাগ করতো। আমাদের দেশে যে শামুকখোলগুলো আসতো সেগুলোর বেশির ভাগ মূলত স্থায়ীভাবে বসবাস করতো পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন এলাকা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে। ভারতে বছর বছর প্রচণ্ড খরার কারণে ওই দেশে এদের প্রজনন এখন প্রায় বন্ধ হয়েছে।

ঠোঁটে শামুক ধরেছে শামুকখোল। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

পাখিটির নামকরণ প্রসঙ্গে ইনাম আল হক বলেন, শামুকখোল পাখির ইংলিশ নাম Asian Openbill আর বৈজ্ঞানিক নাম Anastomus oscitans। আবাসিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এখন বাংলাদেশে বিপুল পরিমণ শামুকখোল দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের হাওড়-বাঁওড় এবং নদী এলাকাগুলোতে শামুকখোল কলোনি স্থাপন করেছে। এই পাখির ঠোঁটের সাথে অন্য কোন পাখির ঠোঁটের মিল নেই। শামুকখোল পাখির ঠোঁটের নিচের অংশের সাথে উপরের অংশে বড় ফাঁক। এরা এই বিশেষ ঠোঁটে শামুক তুলে চাপ দিয়ে শামুকের ঢাকনা খুলে ফেলে এবং ভিতরের নরম অংশ খেয়ে নেয়। মূলত শামুকের ঢাকনা খোলার শৈল্পিক কৌশলের কারণেই এই পাখির নামকরণ করা হয়েছে ‘শামুকখোল পাখি’।

ইনাম আল হক আরও বলেন, শামুকখোল পাখি খুবই নিরীহ পাখি। এদের বাহ্যিকভাবে পুরুষ-স্ত্রী বোঝা যায় না। গায়ের রঙ সাদা কালো। বয়স্ক পাখি হলে তার শরীরের সাদা রঙ অনেকটা কালচে বরণ ধারণ করে। এদের আবাসস্থল থাকে দুটি। একটি স্থায়ী বাসা থাকে তাদের। যেখানে তারা কেবলমাত্র প্রজননের সময় অবস্থান করে। অপরটি হচ্ছে প্রজনন পরবর্তী অস্থায়ী অবস্থান। এরা প্রজননের সময় কেবল নির্দিষ্ট বাসায় চলে আসে। অর্থাৎ এই পাখি যেখানে বাসা বাঁধে সেই বাসাতেই প্রতিবছর প্রজনন করে থাকে। এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় লাগে তাদের বাসা তৈরি করতে। বাসা তৈরি হলে সেখানে তারা ডিম দেয়।

অন্য পাখিদের সাথে শামুকখোল। ছবি আবু বকর সিদ্দিক

এরা পানির ধারে, অল্প পানি অথবা পানির উপরে ভাসমান কিছুর উপর চুপ করে থাকে শিকার ধরতে। এছাড়াও অগভীর পানিতে হেঁটে হেঁটে কাদায় ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খুঁজে। এদের খাদ্য তালিকার ৯০ ভাগ শামুক। এছাড়াও এরা ছোট মাছ, বড় আকাড়ের পোকা, কাঁকড়া, ব্যাঙ খেয়ে জীবন ধারণ করে বলে জানান ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর