অতিথি পাখির অভয়ারণ্য লক্ষ্মীপুরের ‘জনেস্বর দিঘী’
অতিথি পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে লক্ষ্মীপুরের জনেস্বর দিঘী। হাজারো পাখির কলকাকলিতে এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। সদর উপজেলার উত্তর জয়পুরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী এ দিঘীর পাড়ে পাখির জলকেলি আর নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমীরা। এসব পাখি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি এলাকাবাসীর।
জেলা প্রশাসক বলছেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদরের হাজিরপাড়া থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর জয়পুর এলাকায় অবস্থিত প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী জনেস্বর দিঘী এটি। ব্যাক্তি মালিকানাধীন প্রায় ২ একরের (এক একর ৯৬ শতক) এ দিঘীটি এখন শীতকালের অতিথি পাখির অভয়ারণ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারপাশে বাঁশের ঝাড়ে ঘেরা জনেস্বর দিঘীর জলে অতিথি পাখির (বালিহাঁস) আগমনে দিঘির সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠেছে। দিঘীজুড়ে হাজার হাজার পাখির এ যেন এক মিলন মেলা। প্রতিদিন ভোর রাতে ঝাঁক বেঁধে দিঘীতে নামে এসব পাখিরা। আর সন্ধ্যা নামলে নান্দনিক কসরতে ডানা মেলে আকাশে উড়াউড়ি করে তারা। পাখির কিচির মিচির শব্দে ও জলকেলিতে পুরো এলাকা মুখর হয়ে উঠে।
স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ আহম্মদ বলেন, অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে দিঘী পাড়ের বাসিন্দাদের। স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগেই সবাই মিলে এসব পাখিদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন।
ইজারাদার গোপাল কৃষ্ণ বলেন, পাখির বিশ্রামে বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে গড়ে তুলেছেন অভয়াশ্রম। শীত মৌসুমের শুরু থেকেই এ পাখিগুলোর আগমন শুরু হয় এখানে। মৌসুমের শেষের দিকে আবার চলে যায়। প্রতিদিন পাখিদেরকে ভাসমান খাবার দেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় মধ্য জয়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র দে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে নাইজেরিয়া কিংবা সাইবেরিয়া থেকে এসব পরিযায়ী পাখির আগমন। এগুলো বালিহাঁস জাতের। এই দিঘীর আশেপাশে আরও দুই তিনটি দিঘী থাকলেও জনেস্বর দিঘীতেই এ পাখিগুলোর অভয়াশ্রম। বিগত ৭-৮ বছর থেকে প্রতি শীত মৌসুমেই এগুলো নিয়ম করে এখানে এসে বিচরণ করে। ভোর থেকে দিঘীতে পাখিগুলোর আগমন হয়। দিনভর বিচরণ করে সন্ধ্যায় ফিরে যায়।
এদিকে পাখিদের জলকেলি, খুনসুটি আর কিচির মিচির শব্দ উপভোগ করতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমীরা।
তারা বলছেন, এমন অসংখ্য পাখি একসঙ্গে আর দেখা হয়নি। মন খারাপ হলেই দিঘীর পাড়ে ছুটে আসেন অনেকে। একটু বসে পাখি দেখে মনে শান্তি নিয়ে ফেরেন দর্শনার্থীরা। দিঘীটির পাশে তেমন বসার স্থান না থাকায় অনেকে দাঁড়িয়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করেন।
স্থানীয়দের দাবি পাখি ও ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তায় এবং পর্যটন শিল্প বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে দিঘীটি।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার জানান, জনেস্বর দিঘীসহ একাধিক স্থানে অতিথি পাখির অভয়াশ্রমের খবর শুনেছেন তিনি। তবে এসব স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটন স্পট করতে কিছুটা বাধা হলেও পাখিদের নিরাপত্তাসহ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।