এরিয়া-৫১, মানুষের তৈরি অজানা রহস্য!

, ফিচার

মোঃ শরীফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-23 19:29:44

বিজ্ঞানপ্রেমী অথচ এরিয়া-৫১ এর নাম শোনেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যারা বিজ্ঞান ভালোবাসেন কিংবা কল্পবিজ্ঞান যাদের আকর্ষণের বিষয় তাদের কাছে রহস্যে ঘেরা এই স্থানটি সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই। 

আমেরিকার নেভাডা স্টেটের দক্ষিণে, লাস ভেগাস থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পাহাড়ঘেরা মরুভূমির মধ্যে আছে নেভাদা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জ। আধুনিক মারণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাগার। প্রচলিত তথ্যমতে এই স্থানটিতে আমেরিকা ৫’শরও বেশি পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

আমেরিকার ভূখণ্ডে থাকা সবচেয়ে সুরক্ষিত কিছু জায়গা যেমন- পেন্টাগন, হোয়াইট হাউস, নাসার সদর দপ্তর ও বিভিন্ন লঞ্চ প্যাডেও অনুমতি নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারলেও এরিয়া-৫১ এর আশপাশে মিডিয়া বা জনসাধারণের প্রবেশাধিকার একেবারেই নিষিদ্ধ। 

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও জায়গাটিতে নেই কোনো সীমানা প্রাচীর! তবে চারদিকে খোলা বলেই এই জায়গায় মন চাইলেই প্রবেশ করতে পারবেন, সে আশার গুড়ে বালি। কঠোর সিকিউরিটি ব্যবস্থা, গিরগিটির মতো ছড়িয়ে থাকা হাজারো স্বশস্ত্র সৈনিক, অত্যাধুনিক ড্রোন এবং সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক নজরদারি, মোশন, সাউন্ড, লেজার ও স্মেল ডিটেক্টরসহ রয়েছে অদৃশ্যমান সিকিউরিটি ব্যবস্থাও। তাই তো নোটিশ টাঙ্গিয়ে বড় করে লিখে দেওয়া হয়েছে, Use of deadly force Authorized, যা জানান দেয়, নিষেধ সত্ত্বেও প্রবেশের চেষ্টা করলে মৃত্যু নিশ্চিত।

কিন্তু কেন এই নিরাপত্তা, কী আছে এর ভেতরে? এমন কী গবেষণা চলছে সেখানে? এরকম হাজারো প্রশ্ন আজো দানা বেঁধেছে মানুষের মনে। তবে সে প্রশ্নের উত্তর জানা কিংবা জানার চেষ্টা করা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সামিল!

স্থানটিকে ঘিরে মার্কিন সেনাদের অস্বাভাবিক মাত্রার সুরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্ব জুড়ে সন্দেহ এবং কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে ভেবে থাকেন, এখানে মার্কিন সরকার বিশ্বব্যাপি নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে বিশেষভাবে প্রচলিত আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে থাকা প্রাণের সন্ধানে কাজ করছে এ স্থানটি। এলিয়েনদের যাতায়াতের গুজবসহ রয়েছে হাজারো কল্পনা-জল্পনা। এছাড়া শোনা যায় বিভিন্ন ধরণের এয়ারক্রাফট ও ওয়েপন সিস্টেম নিয়েই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয় এ জায়গাটিতে। 

অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট ও ওয়েপন নিয়েই গবেষণা হয় এরিয়া-৫১ এ

১৯৮৯ সালের বব লাজার নামের একজন বিজ্ঞানী এরিয়া-৫১ এ কাজ করছিলেন বলে দাবি করেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে স্থানটিতে এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগ, ইউএফও যাতায়াতসহ অনেক রহস্যজনক তথ্য উঠে আসে। তবে সেসবের কোনো সত্যতা আজ পর্যন্ত মেলেনি।

চাঁদে অবতরণ নিয়ে মানুষের মনে যে সন্দেহ তাকে দৃঢ় করতে কাজ করে এই স্থানটি। অনেকে মনে করেন এরিয়া-৫১ এ শুটিং করে নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনের চাঁদে অবতরণের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল! সেসব ঘটনা, মিথ্যা হোক কিংবা সত্য, এরিয়া-৫১ আজো রয়ে গেছে মানুষের জানার বাইরে। 

মানুষ আশায় আছে, কোনো একদিন হুট করে মুখ খুলবে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। জানাবে দীর্ঘ দিন ধরে চলা রহস্য গড়া এই স্থানে চলমান কীর্তিকালাপের কথা। দূর হবে মানুষের মনের শত প্রশ্ন আর জল্পনা-কল্পনা। ততদিন আড়ালেই থাকুক এরিয়া-৫১। নিজের কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে লেখকরা রচনা করুক হাজারো বই, নির্মাতারা তৈরি করুক শত সিনামা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর