নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের পতিত হাজার হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। শুধু জেলা নয় দেশের বিভিন্ন স্থানের সবজির চাহিদা মিটাচ্ছে এই পতিত জমির উৎপাদিত ফসল। পাশাপাশি হাওরের এক ফসলি আয়ের ওপর নির্ভর করা কৃষকদের ভাগ্যেরও ঘটেছে পরিবর্তন। তারা এখন ধান চাষের পাশাপাশি বাহারি রকমের সবজি চাষও করছেন।
বিশেষ করে বিষমুক্ত সুস্বাদু মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ফেলেছে ব্যাপক সাড়া। জেলার পাশাপাশি এসব মিষ্টি কুমড়া চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। পাইকারি খুচরা বিক্রেতারা এখন সরাসরি হাওর থেকে সংগ্রহ করছেন এসব মিষ্টি কুমড়া। পতিত জমিতে কুমড়ার চাষে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জেলার মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর পতিত জমিতে চাষ করা হয়েছে মিষ্টি কুমড়া। এর সাথে চাষ করা হয়েছে আলু, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, গম, ভুট্টাসহ সূর্যমুখী ফুল। কৃষি বিভাগ সার, বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষকের মাঝে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে পতিত জমিতে বাম্পার ফলনের মুখ দেখেছে মিষ্টি কুমড়া। উৎপাদিত এই মিষ্টি কুমড়া থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আয় হবে। তারা বলছেন, সব সবজি মিলিয়ে কৃষকের ১৮-২০ কোটি টাকা আয় হবে।
মিষ্টি কুমড়া চাষিরা বলছেন, মিষ্টি কুমড়া চাষ করে তারা লাভবান। শ্রমও ধান চাষের চেয়ে কম তবে লাভ বেশি। মিষ্টি কুমড়া বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এসে সরাসরি ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে ধানের মতো শুকানো, রোদে দেয়া, আগুনে সেদ্ধ করার মতো কোনো ঝামেলা নেই। এটাও এক ধরনের শান্তি।
পতিত জমির মিষ্টি কুমড়া এক একটি সর্বোচ্চ ১৫ কেজি হয়ে থাকে। খেতে মজাদার এই মিষ্টি কুমড়া হাওরে সম্পূর্ণ বিষ ছাড়া উৎপাদন হয়। আকার অনুসারে দামও ভিন্ন।
এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন, মদন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান ও খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন।
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, অনাবাদি এসব জমি এক সময় ফসলে ভরে উঠবে। পতিত জমির ফসল উৎপাদন দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
খালিয়াজুরী উপেজরার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে ওই অঞ্চলের অসংখ্য নিম্ন আয়ের পরিবারের।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, মিষ্টি কুমড়া চাষ হয়েছে ১৬৫ হেক্টর জমি। অর্জন লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৭৭৫ মেট্রিকটন। প্রতি কাঠায় ব্যয় আনুমানিক ৫ হাজার টাকা। ১৬৫ হেক্টরে খরচ ২ কোটি ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রায় দেড়শ কৃষক এই মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আয় করবেন আনুমানিক ১৪ কোটি টাকা।
জেলার মদন উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার ব্যাপক ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, মিষ্টি কুমড়া চাষ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমি। অর্জন লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন। প্রতি কাঠায় ব্যয় আনুমানিক ৫ হাজার টাকা। ৫০ হেক্টরে খরচ দেড় কোটি টাকা। প্রায় ২০০ কৃষক এই মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। আয় করবেন আনুমানিক ৩ কোটি টাকা।