‘প্রথম প্রদীপ জ্বালো মম ভবনে হে আয়ুষ্মতী
আঁধার ঘিরে আশার আলো আনুক তোমার গৃহের জ্যোতি।।’
কবি কাজী নজরুলের লেখা গানের আবহে মনের অন্ধকার দূর হয়ে যেন আলো জ্বেলে ওঠে। তেমন ভাবেই জীবনের অন্ধকার কাটিয়ে পবিত্রতার আলো চতুরি্দকে ছড়িয়ে দেওয়ার উৎসব এসেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে দেবী কালিমার পুজা এবং দীপাবলি উদযাপিত হবে।
কার্তিক মাসের হাত ধরে এসেছে হেমন্ত ঋতু। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) কারি্তকের অমাবস্যা তিথিতে উদযাপিত হবে দীপাবলি। চারদিক আলোকিত হবে শত শত প্রদীপে। অশুভ শক্তিকে দূর করে সত্য, পবিত্র ও সুন্দর আলোয় জীবন সাজানোর আবেদনে দেবীর সামনে করজোরে উপস্থিত হবেন ভক্তরা।
পরম আরাধ্য শক্তিরূপ দেবী কালী হলেন স্নেহপরায়ণ দেবী পার্বতীর রুদ্ররূপ। তাই দেবী পার্বতী অর্থাৎ দুর্গার মতো তিনিও শক্তির আধার। আদিপরাশক্তি সম্পন্ন শ্যামা দেবী ‘কালিমা দেবী’ নামে প্রচলিত ‘মহাকালী’ এবং ‘শ্মশান কালী’ রূপেও পূজিত হন। রমনা কালী মন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ দেশের বিভিন্ন মন্দির এবং স্থানে দেবীর পূজা হবে দিবাগত রাত্রে।
মন্দির ছাড়াও গৃহকর্মীরা আজ ঘরের সর্বত্র থেকে অমঙ্গলের অন্ধাকার দূর করতে সারা বাড়িতে প্রদীপ জ্বালাবেন। শিশুরা তারাবাতি, বাজি সহ নানান আন্দন্দ আয়োজনে মেতে উঠবে।
দীপাবলি বা দিওয়ালি উৎসব নিয়ে হিন্দু পুরাণ কাহিনী ও ইতিহাস থেকে হরেক রকম তথ্য পাওয়া যায়। পুরাণ কাহিনী মতে, ক্ষীরসাগর মন্থনের পর কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে অমৃতভান্ড হাতে সমুদ্র থেকে ধন্বন্তরি উঠে এসেছিলেন। সেজন্য তিথির নাম ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী (ধনতেরাস)। ঐ দিন একই সঙ্গে স্বর্গচ্যুত দেবী লক্ষ্মীও সমুদ্র থেকে উঠে আসেন। তারপর অমৃতের ভাগ নিয়ে দেবাসুরের লড়াইয়ের পরে, লক্ষ্মীদেবী পুনরায় স্বর্গে ফিরে যান এ কার্তিকী অমাবস্যার রাতেই। সে ঘটনার স্মরণেই ঐ অমাবস্যার রাত সাজানো হয় প্রদীপ জ্বালিয়ে। এইজন্য আজকের দিনে পুনরায় স্বর্গে যাওয়া উপলক্ষে দেবী লক্ষ্মীরও পূজা করা হয়।
আবার অন্য হিন্দু পুরাণ মতে, দেবতাদের পরাজিত করে বলি রাজা লক্ষ্মীকে পাতালে লুকিয়ে রাখেন। এ কার্তিকী অমাবস্যার রাতেই নারায়ণ বলিরাজাকে পরাজিত করে পাতাল থেকে লক্ষ্মীকে উদ্ধার করে আনেন। রামায়ণ কথন অনুসারে রাবণ বধের পর সীতাকে উদ্ধার করে রাম যেদিন অযোধ্যায় ফিরেছিলেন, সে দিনটি ছিল কার্তিকী-অমাবস্যা। পুরো অযোধ্যা সেদিন রাম-সীতাকে বরণ করার জন্য আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছিল। আবার মহাভারতে অনুসারে, নবকাসুরকে বধ করে কৃষ্ণ অসুরের বন্দিনী ৬০ হাজার গোপিনীকে উদ্ধার করেন এ অমাবস্যার রাতেই। পরে তাদের সবাইকে কৃষ্ণ বিবাহও করেন। কৃষ্ণের ভক্ত-অনুগামীদের কাছে ঐ গোপিনীদের মুক্তির স্মরণ উৎসবই দীপাবলি।