শীতে কদর বেড়েছে খেজুর রসের

, ফিচার

বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2024-12-12 14:23:56

আবহমান বাংলায় শীত মৌসুমে মধুবৃক্ষ খেজুর গাছের রসের চাহিদা বাড়ে অনেকাংশে। বছরজুড়ে খেজুর গাছ অযত্ন-অবহেলায় পরে থাকলেও শীতের আগেই চর্চা শুরু হয় রসের চাহিদায়। কুয়াশাচ্ছন্ন কাক ডাকা ভোরে খেজুরের রস পান করতে দূর দূরান্তে ছুটে যান রসনাপ্রেমীরা। প্রকৃতির এই নজরকাড়া সৌন্দর্যে গাছ থেকে কলসভরা খেজুরের রস পেরে তৃষ্ণা মেটানোর দৃশ্য যেন হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মত।

বাঙালির সংস্কৃতিতে পিঠাপুলির মত শীতের অংশ খেজুরের রস। আর তাই গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে চাহিদা মেটানো হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের।

প্রতি মৌসুমের মত এবারও রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় খেজুরগাছের রস সংগ্রহের দৃশ্য চোখে পড়ার মত। গাছ প্রস্তুত শেষে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। মনের আনন্দে এই দৃশ্য উপভোগ করে নিজেদের ক্যামেরাবন্দী করছেন দর্শনার্থীরা।

গাছিরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও শীত মৌসুমে খেজুর রস সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তারা। আকারভেদে প্রতিটি গাছ থেকে ৩-৫ লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ করে আয় করেন গাছিরা।

গাছিরা বলেন, এবছরে গাছের সংখ্যা কমেছে। কয়েক বছর আগেও খেজুর গাছের সংখ্যা বেশি ছিল। তাই খেজুরের রসের চাহিদা পূরণ করেও গুড় তৈরি করা হতো। এখন গাছের সংখ্যা কমে গেছে, গাছের দামও বেশি। গাছ চুক্তিতে নিয়ে মিঠাই তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল। তবুও মৌসুমী এই ব্যবসা বংশগত খেজুরের রস সংগ্রহ একটা নেশা। যতদিন বেঁচে আছি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করবো। এটা সখের বসেও করা হয়ে থাকে অনেকেরই৷

গাছ থেকে নামানো খেজুরের রস, ছবি: বার্তা২৪.কম

রংপুর শহর থেকে শ্যামপুরে খেজুরের রস খেতে যাওয়া রসনাপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন। কাক ডাকা ভোড়ে আনন্দের সঙ্গে রস খেতে যান তারা। অনুভূতি প্রকাশ করে রুবেল, শাওম, আনোয়ার নামের তিন যুবক বলেন,প্রতি বছর খেজুরের রস খেতে অপেক্ষায় থাকি। খেজুরের রস না খেলে শীত মনেই হয় না। বন্ধুসহ প্রায় ৪-৫ দিন খেজুরের রস খেতে প্রস্তুত থাকি। ভোরে গিয়ে পৌঁছে গাছ থেকে রস নামিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। শহরে বিক্রি হয় স্যালাইন বা অন্য কিছু মেশানো থাকে তাই পরিবারের জন্য বোতলে করে নিয়ে যাই। সবমিলিয়ে অনুভূতিটা অন্যরকম।

খেজুরের রস বিক্রেতারা বলেন, ‘ঘুম থাকি উঠিয়াই ভাল নাগে, দূর হাতে মানুষ গাড়িত করি রস কাবার জইনতে আইসে। হামার সাতে ছবি তোলে খুব ভাল নাগে। একেক দিন না হইলেও প্রায় একশোর বেশি মানুষ আইসে। এক গ্লাস রসের দাম ১০ টাকা করি কিনি খায়। দামও কম আছে আর লিটার হিসাবে নিলে ৫০ টাকা করি নেয়া হয়। এক গাছে ৩-৫ রিটার রস হয় প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার খেজুর রসও বিক্রি হয়। শীত যত বাড়বে খেজুর রসের স্বাদও তত বাড়ে।’

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, খেজুরের রস ও গুড় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। খেজুরের গাছ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরিচর্যা করা হলে এ গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে আয় করা সম্ভব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর