যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের চেয়ে জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাম্প্রতিক এক জরিপে রিপাবলিকান দলের ৫৩ শতাংশ সমর্থক এই মত দিয়েছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউইজ।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট ও ইউগভ নামের একটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে মার্কিন রাজনীতি নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে ১৮৬১-৬৫ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে তুলনামূলক একটি প্রশ্ন ছিল। প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প অপেক্ষাকৃত ভালো বলে মত দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের ৫৩ শতাংশ। অথচ গৃহযুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে আসা এবং দাসপ্রথা বিলুপ্ত করা থেকে সাবেক প্রেসিডেন্টই ছিলেন বেশি জনপ্রিয়। এরপর ছিলেন রোনাল্ড রিগ্যান।
এই একই প্রশ্নের একেবারে বিপরীত উত্তর এসেছে ডেমোক্র্যাট হিসেবে পরিচিত ও স্বাধীন ভোটারদের কাছ থেকে। দুজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মধ্যে ডেমোক্র্যোটদের ভোট পড়েছে আব্রাহাম লিংকনকের পক্ষে। অভিশংসন তদন্ত চলাকালে ডোনাল্ড ট্র্যাম্পের প্রতি রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের এই আস্থা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অভিশংসন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি আসবে সিনেট থেকে, যেখানে রিপাবলিকানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সমর্থকেরা পক্ষে থাকলে সিনেটেও এর অন্যথা হওয়ার কথা নয়। জরিপের এ ফলাফল জেনে অভিনেতা বিলি ব্যাল্ডউইন বলেন, এর মানে হচ্ছে রিপাবলিকানদের ৫৩ শতাংশই জানে না যে, আব্রাহাম লিংকন কে ছিলেন।
এদিকে সত্যিই, রিপাবলিকান কর্মী সমর্থকদের প্রশ্ন করলে অনেকেই আব্রাহাম লিংকন সম্পর্কে তেমন জানেন না বলে দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে। মজার বিষয় রিপাবলিকানদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প জনপ্রিয় হওয়ার কারণ তিনি বৃদ্ধ। দেশটিতে এর আগে দায়িত্ব পালন করা ৪৪ জন প্রেসিডেন্টের বয়সের গড় ছিল ৫৫। সবচাইতে কম বয়স্ক ছিলেন থিওডোর রুজভেল্ট। রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে পছন্দ করার বিষয়ে জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রথম শত-কোটিপতি প্রেসিডেন্ট। তার মন্ত্রিসভার সদস্যরাও ধনী। ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া দেশটির গত ষাট বছরের ইতিহাসে এমন একজন প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হননি যাদের অন্তত রাজ্য গভর্নর কিংবা কংগ্রেস সদস্য হিসেবে অভিজ্ঞতা নেই।
আব্রাহাম লিংকন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি। তিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রথম রাষ্ট্রপতি, এবং ১৮৬১ হতে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। দাস প্রথার চরম বিরোধী লিংকন ১৮৬০ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৮৬৩ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটান এবং মুক্তি ঘোষণার (Emancipation Proclamation) মাধ্যমে দাসদের মুক্ত করে দেন। দাস প্রথাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় তিনি উত্তরাঞ্চলীয় ইউনিয়ন বাহিনীর নেতৃত্ব দেন, এবং দক্ষিণের কনফেডারেট জোটকে পরাজিত করেন। জন উইল্ক্স বুথ নামক আততায়ীর হাতে তিনি ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ ও নিহত হন। আব্রাহাম লিংকন (১২ ফেব্রুয়ারি, ১৮০৯-এপ্রিল ১৫, ১৮৬৫) ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট। ১৮৬১ সালের মার্চে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ১৫ এপ্রিল ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার অসাধারণ নেতৃত্ব গুণ,বাগ্মিতা, দূরদর্শিতার বলে তিনি আমেরিকান গৃহযুদ্ধকালীনও সফলভাবে সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে সক্ষম হোন।
অন্য দিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি। তিনি এছাড়াও একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব, লেখক হিসেবে আলোচিত। তিনি দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশ্যানের পরিচালক এবং ট্রাম্প এন্টারটেইনম্যান্ট রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতা। ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক শহরের স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রেড ট্রাম্পের ছেলে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে নিজের কর্মজীবন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার বাবার যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল। ট্রাম্প পেন্সিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অধীন হোয়ারটন স্কুলে অধ্যয়নের সময় তার পিতার ‘এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সান’ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি তার পিতার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। ১৯৭১ সালে ট্রাম্প তার পিতার প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশ্যান’ রাখেন।
ট্রাম্প বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল স্টেট ব্যবসা এবং মিডিয়া তারকাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। ট্রাম্প ২০১৫ সালের ১৬ জুন রিপাবলিকান পার্টির অধীনে ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার মনোনয়ন প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। ট্রাম্প তার পূর্বের প্রচারণা কর্মকাণ্ড দিয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং জনসমর্থন অর্জনে সক্ষম হন। জুলাই ২০১৫ থেকে রিপাবলিকান পার্টির জনমত নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে পছন্দের দিক থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৩০৬টি ইলেক্টরাল ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।