হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাবু মিয়ার ছেলে মো. রিপন মিয়ার অনেক স্বপ্ন ছিল ইউরোপে পাড়ি দেয়ার। এক ছেলের পিতা রিপন মিয়া তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, বাবা-মা, আত্মীয় পরিজন রেখে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় আফ্রিকায়।
গত ৩১ অক্টোবর দালাল মারফত আলজেরিয়ার ওরান থেকে রাতের বেলা স্পিড বোট যোগে অন্যান্য দেশের আরও ১৮ জনসহ রিপন মিয়া রওনা হয় স্পেনের উদ্দেশ্যে। উত্তাল ভূমধ্যসাগরে ৬ ঘন্টার যাত্রা শেষে যখন স্পেনের উপকূল দৃষ্টিসীমায় আসে সে সময় নৌকা থেকে তারা লাফিয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক পানিতে ডুবে মারা যায় মো. রিপন মিয়াসহ মরক্কোর একজন। নৌকা থেকে তিনজন বাংলাদেশিসহ ১৬ জন স্পেনের আলমেরিয়ায় অবতরণ করে।
স্পেনের এনজিও সিআইপিআইএমডির পক্ষ থেকে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) আলমেরিয়ার যেয়ে মো. রিপন মিয়ার মৃতদেহ সনাক্ত করেন। রিপন মিয়ার পরিবারের অনুরোধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় রিপন মিয়ার মরদেহ অবশেষে ফিরছে প্রিয় বাংলাদেশের মাটিতে। তবে জীবিত রিপন মিয়া নয়, কফিনে শুয়ে।
আগামী ৫ জানুয়ারি দুপুরে টার্কিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে তার মরদেহ পৌঁছাবে বাংলাদেশে।
গত ৪ নভেম্বর মো. রিপন মিয়া আরেকটি ছেলে সন্তানের পিতা হন। রিপন মিয়া কখনো আর জানবে না সে সন্তানের কথা, তার সন্তান আর কখনো পাবে না পিতার স্নেহ মাখা হাতের পরশ। রিপন মিয়ার সকল স্বপ্ন, সকল আশার পরিসমাপ্তি ঘটল ভূমধ্যসাগরের অতল জলরাশিতে।
স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম ) মূতাসিমুল ইসলাম জানান, সাগরপথে লিবিয়া , আলজেরিয়া থেকে ইউরোপে এই ধরনের দুর্গম পথে যাত্রা অত্যন্ত বিপদসংকুল। দালালের প্ররোচনায় এই ঝুঁকিপুর্ণ সাগরপথে পা না বাড়ানোর জন্য তিনি প্রবাসীদের অনুরোধ করেন।
মো. রিপন মিয়ার কাহিনীটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, নিজ পরিবার, সন্তান, বাবা মায়ের ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে দূর প্রবাসে এমন মৃত্যু যেন আর কারো না হয় এ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য তিনি সকলকে পরামর্শ দেন।