পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতির প্রতিনিধিত্ব

ভারত, আন্তর্জাতিক

ড. রূপকুমার বর্মণ | 2023-08-31 17:46:05

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ-ভারতের বিভাজনের পর ভারত ও পাকিস্তানের দুদেশের দুই আইন মন্ত্রীই ছিলেন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। ভারতের আইন ও ন্যায়বিচার দপ্তরের মন্ত্রী ড. বি. আর. আম্বেদকর (১৯৪৭-১৯৫১) এবং পাকিস্তানের আইন, ন্যায়বিচার ও শ্রম দপ্তরের মন্ত্রী যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল (১৯৪৭-১৯৫০) উভয়েই স্বাধীন রাষ্ট্রের মন্ত্রণালয়ে তথাকথিত পিছিয়ে পড়া জনগণের প্রতিনিধিত্বের দাবি করেছিলেন যাতে করে তাদের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। কিন্তু ড. আম্বেদকর ও মণ্ডল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে কায়েমি স্বার্থের বাঁধার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দুজনেই স্বাধীন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।

ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখা যাবে যে ঔপনিবেশিক শাসনকালে বিভিন্ন প্রদেশ (বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলা) ও কেন্দ্রিয় সরকারের তপশিলি জাতির প্রতিনিধিগণ তাঁদের অভাব–অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরতে কুণ্ঠিত হননি। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতির অবস্থা কখনই শক্তিশালী হয়নি। সরকারে তাঁদের দুর্বল অবস্থার বীজ বপিত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের যাত্রার সময় থেকেই (১৯৪৭)। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ র নির্বাচন-পূর্ব সময়ে পশ্চিমবঙ্গে তপশিলি জাতির কেবল মাত্র দুজন মন্ত্রীর অস্তিত্ব ছিল (হেমচন্দ্র নস্কর ও মোহিনীমোহন বর্মন)।

বিধান চন্দ্র রায় ১৯৫২ র নির্বাচনের পরে হেমচন্দ্র নস্কর (কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প) ছাড়াও শ্যামাপ্রসাদ বর্মন (রাজবংশী সম্প্রদায়ের বিধায়ক: শুল্ক দপ্তর) ও সতীশ চন্দ্র সিংহরায়কে (রাজবংশী জাতির বিধায়ক:পরিবহন দপ্তরের উপমন্ত্রী) তাঁর সরকারে স্থান দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিসভা [মোট = ১৪, উচ্চবর্ণীয় হিন্দু:-১১, তপশিলি:২, মুসলিম:১] ও উপমন্ত্রকের [মোট =১৫, উচ্চবর্ণীয় হিন্দু: ১২, তপশিলি জাতি:-১, তপশিলি জনজাতি: ১, মুসলিম: ১] তপশিলি জাতির উপস্থিতি ছিল যথাক্রমে ১৪% ও ৬% (যেখানে উচ্চবর্ণীয় হিন্দুরা ৭৮% ও ৮০% মন্ত্রক দখলে রেখেছিলেন)।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার দ্বিতীয় নির্বাচনের পরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারে তপশিলি জাতির প্রান্তিক অবস্থানের খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ র মধ্যে পূর্বে উল্লেখিত তিনজন মন্ত্রী ছাড়াও পৌণ্ড্র জাতির বিধায়ক শ্রীঅর্ধেন্দু শেখর নস্করকে স্বাস্থ্য দপ্তরের উপমন্ত্রী করা হয়েছিল। সার্বিকভাবে মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতির উপস্থিতি ছিল মাত্র ১৩.৭৯% পক্ষান্তরে উচ্চবর্ণীয় হিন্দু ও মুসলমানগণ যথাক্রমে ৭৫.৮৬% ও ১০.৭৯% মন্ত্রক দখলে রেখেছিলেন। এখানে আরোও লক্ষণীয় বিষয় হল যে পশ্চিমবঙ্গের মাত্র দুটো তপশিলি জাতি (রাজবংশী ও পৌণ্ড্র) ছাড়া অন্য সম্প্রদায়গুলোর কোন প্রতিনিধিত্ব ছিলনা।

বিধানসভার তৃতীয় নির্বাচনের পর পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় (১৯৬২ – ৬৭) তপশিলি জাতির কোন পূর্ণমন্ত্রী ছিলেননা। প্রথম দিকে (১১ই মার্চ – ৮ই জুলাই, ১৯৬২) তপশিলি জাতির কেবল দুজন মন্ত্রী [অর্ধেন্দু শেখর নস্কর ও প্রমথরঞ্জন ঠাকুর (নমঃশুদ্র বিধায়ক তথা মতুয়া মহাসংঘের প্রতিষ্ঠাতা)] ও একজন উপমন্ত্রীকে স্থান দেওয়া হয়েছিল যা ১৯৬৩ র ডিসেম্বর পর্যন্ত বজায় ছিল। কিন্তু এরপর থেকে ১৯৬৭ র নির্বাচন পর্যন্ত কেবলমাত্র অর্ধেন্দু শেখর নস্কর ছাড়া আর কোন তপশিলি জাতির বিধায়ককে মন্ত্রিসভায় দেখা যায়নি। তাই তৃতীয় বিধানসভার (১৯৬২ -১৯৬৭) শেষপর্যায়ে মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতির উপস্থিতি ৬% বেশি ছিল না যেখানে উচ্চবর্ণীয় হিন্দুরা ৮১% মন্ত্রককে নিজেদের দখলে রেখেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে রাজবংশী সম্প্রদায়ের বদলে এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে।

মন্ত্রিসভায় নমঃশুদ্রদের উপস্থিতি প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের (২২ মার্চ – ২০ নভেম্বর, ১৯৬৭) সময়কালেও বজায় ছিল। এমনকি নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের চারুমিহির সরকারই (বাংলা কংগ্রেসের হাঁসখালি বিধানসভার বিধায়ক) অজয় মুখার্জীর নেতৃত্বধীন সরকারে একমাত্র তপশিলি জাতির মন্ত্রী ছিলেন (যা ছিল মন্ত্রিসভার মাত্র ৫%)। পিডিএফ (২১ নভেম্বর ১৯৬৭ – ১৪ই জানুয়ারি১৯৬৮) ও কংগ্রেস-পিডিফ (১৫ই জানুয়ারী – ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৬৮) সরকারের আমলেও তপশিলি জাতির রাজনৈতিক প্রান্তিকতার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। কেবলমাত্র জগদানন্দ রায়কে (ফালাকাটার রাজবংশী সম্প্রদায়ের বিধায়ক) তপশিলি জাতি ও উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

অজয় মুখার্জীর নেতৃত্বে দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হলে (১৯৬৯) মন্ত্রিসভার গঠনে প্রথম যুক্তফ্রন্টের পুনরাবৃত্তি ঘটে। চারুমিহির সরকারকে পুনরায় সমষ্টি উন্নয়নের দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ‘বাগদি-বাউরি-ডোম-মুচি অধ্যুষিত অঞ্চল’ থেকে নির্বাচিত কৃষ্ণচন্দ্র হালদারকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়েছিল। তা সত্বেও মন্ত্রিসভার গঠনের নিরিখে তপশিলি জাতির সংখ্যা ৬% এর বেশি ছিলনা। তপশিলি জাতির জনসংখ্যার তুলনায় এটা নেহাৎই বেমানান।

১৯৬৯ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অস্থিরতা তপশিলি জাতির ক্ষমতায়নে খুব বেশি পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেনি। ১৯৭২ এ সিদ্ধার্থশংকর রায়ের নেতৃত্বে পশিমবঙ্গে কংগ্রেসের স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও ২৯ সদস্যের মন্ত্রিসভায় [২৯ জন পূর্ণমন্ত্রী, ৯ জন রাষ্ট্রমন্ত্রী ও ৪ জন উপমন্ত্রী] তপশিলি জাতির কোন পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন না। কেবলমাত্র নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের আনন্দমোহন বিশ্বাস (কৃষি ও সমষ্টি উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী) ও পৌণ্ড্র সম্প্রদায়ের গোবিন্দ চন্দ্র নস্কর (শিক্ষাদপ্তর) কে রাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এখানে লক্ষণীয় যে পশ্চিমবঙ্গের সরকারের এখানকার সর্ববৃহৎ তপশিলি (রাজবংশী) সম্প্রদায়ের  কোন উপস্থিতি ছিলনা। মন্ত্রিসভায় রাজবংশীদের অনুপস্থিতি ১৯৭০ র দশক থেকে তাদের মনে আঞ্চলিকতার বীজ বপন করেছিল।

১৯৭৭ এ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের আবির্ভাব ভারত তথা বহির্বিশ্বে বহুআলোচিত বিষয়। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের যাত্রা পশ্চিমবঙ্গের সরকার গঠনে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। প্রথমত, উপমন্ত্রীর পদ তুলে দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, বামফ্রন্টের শরিক দলগুলোকে সন্তুষ্ট রেখে মন্ত্রিসভার গঠন ও মন্ত্রক বিতরণ অত্যন্ত কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তৃতীয়ত, ভারসাম্য রক্ষার রাজনীতির মধ্যে সরকারে তপশিলি জাতির প্রবেশ করার সুযোগ হয়ে পড়ে খুবই সীমিত। তপশিলি জাতির আসনে বামফ্রন্টের অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ হলেও একমাত্র কান্তি বিশ্বাস [নমঃশুদ্র সম্প্রদায়ের বিধায়ক; যুব ও পাসপোর্ট মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী] ছাড়া আর কোন তপশিলি জাতির বিধায়ককে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। ৩০ সদস্যের মন্ত্রিসভার মধ্যে এটা ছিল ৩.৩% যা পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত গঠিত মন্ত্রিসভার মধ্যে সর্বনিম্ন। এ প্রসঙ্গে একথা বলাও অযৌক্তিক হবে না যে মন্ত্রিসভায় দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের তপশিলি জাতির প্রতিনিধিত্ব সম্পূর্ণভাবে লোপ পেয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভাতেও (১৯৮২ -৮৭ ) তপশিলি জাতির অবস্থানের আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। যদিও ১৯৮২ র নির্বাচন তপশিলি জাতির সংরক্ষিত আসনের ৯১.৫২% দখল করেছিল বামফ্রন্ট কিন্তু মন্ত্রিসভায় তারা মাত্র ৪.৪৪% পদ পেয়েছিলেন যা তাঁদের আসন বা জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কম। তবে এই মন্ত্রিসভায় নমঃশুদ্র জাতির শ্রীকান্তি বিশ্বাস প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন আর রাজবংশী জাতির বনমালী রায় পেয়েছিলেন তপশিলি জাতি ও আদিবাসী কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রক।

মন্ত্রকপ্রাপ্তির নিরিখে তপশিলি জাতির অবস্থান খানিকটা উন্নত হয়েছিল বামফ্রন্টের তৃতীয় মন্ত্রিসভায় (১৯৮৭ -৯১)। পূর্বতন দুজন ছাড়াও শ্রীদীনেশ চন্দ্র ডাকুয়া (রাজবংশী জাতির বিধায়ক) মন্ত্রিসভার স্থান পেয়েছিলেন। চতুর্থ বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় (১৯৯১ -১৯৯৬) দুজন রাজবংশী জাতির মন্ত্রী ছাড়াও এই প্রথম ‘বাউড়ি-বাগদি অঞ্চল’ থেকে দুজন [১জন বাউড়ি ও ১জন বাগদি] তপশিলি জাতির বিধায়ক মন্ত্রিত্ব পাওয়ায় তাদের শতকরা হার একটু বেড়েছিল। এই বৃদ্ধির হার আরেকটু বেড়েছিল পঞ্চম বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় (১৯৯৬–২০০১) যেখানে তপশিলি জাতির উপস্থিতির হার ছিল ১০% [ কান্তি বিশ্বাস (নমঃশুদ্র), দীনেশ চন্দ্র ডাকুয়া ও যোগেন চন্দ্র বর্মন (রাজবংশী), নিমাই চন্দ্র মাল (মাল), ও বিলাশি বালা সহিস]। মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতির এই অবস্থান বজায় ছিল মুখ্যমন্ত্রীত্ব থেকে জ্যোতি বসুর পদত্যাগের (২০০০) পরও।

মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদের ভট্টাচার্যের শাসনকালে বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতির অবস্থান ও গুরুত্ব অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। ষষ্ঠ (২০০১-২০০৬) ও সপ্তম বাম মন্ত্রিসভায় (২০০৬-২০১১) তপশিলিদের হার ছিল ১৬.৬৬% (পাঁচ জন পূর্ণমন্ত্রী ও ৩ জন রাষ্ট্রমন্ত্রী)। অবশ্য মোট জন সংখ্যা, আসন সংখ্যা ও গুরুত্বের নীরিখে তা কোনভাবেই উচ্চবর্ণীয়দের সঙ্গে তুলনীয় ছিল না।

বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনকালে (১৯৭৭-২০১১) তপশিলি জাতির বিধায়কগণ প্রায় সম্পূর্ণভাবেই বামদলগুলোর সঙ্গে ছিলেন কিন্তু ক্ষমতায়নের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা তাঁদের প্রান্তিক অবস্থানের উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। এই অবস্থানের কোন রকম হেরফের হয়নি বাম-পরবর্তী ডান-শাসিত মন্ত্রিসভায় (২০১১-২০১৬ ও ২০১৬ –২০২১)। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন প্রথম ও দ্বিতীয় তৃণমূল মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতির অংশ মাত্র ৬% থেকে ১০%। এটা কোন ভাবেই তাঁদের মোট আসন (৬৮ =২৩%) এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

তবে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অসংরক্ষিত আসনে তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায় থেকে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী চয়নের মানসিকতা। পৌণ্ড্র, রাজবংশী ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কয়েকজন প্রার্থী অসংরক্ষিত আসন থেকে জয়ী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় প্রবেশ করেছেন । আর এদের মধ্যে মন্ত্রিত্বও জুটেছে একজনের ভাগ্যে। কিন্তু শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃতীয় মা-মাটি-মানুষের সরকারে সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত ৮৪ জন বিধায়ক থেকে মাত্র ছয় জন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। এই ছয় জনের মাত্র তিন তপশিলি জাতির বিধায়ক [শিউলি সাহা (নমঃশূদ্র): পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর, পরেশ চন্দ্র অধিকারী (রাজবংশী): বিদ্যালয় শিক্ষা ও দিলিপ মণ্ডল (পৌন্ড্র): পরিবহন দপ্তর] রাষ্ট্রমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্যনীয় যে ২০২১ এর নির্বাচনে তপশিলি জাতির একটা বড় অংশ ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেওয়ায় তাঁদের থেকে মন্ত্রক প্রাপ্তির সুযোগ অনেকটাই কমে গেছে। তবে উত্তরবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আগামী দিনে তপশিলি জাতির  আরোও দুয়েকজন মন্ত্রী হবেন বলে আশা করা যায়!

গুরুত্বের বিচারে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভায় তপশিলি বিধায়কদের অবস্থান কখনই প্রান্তিকতার মাত্রাকে অতিক্রম করতে পারেনি। যে কয়েকটি সম্প্রদায় [রাজবংশী, নমঃশুদ্র, পৌণ্ড্র, বাগদি, মাল, বাউড়ি, ইত্যাদি] মন্ত্রিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা আসলে তপশিলি জাতির প্রতিনিধিত্ব করার বদলে উচ্চবর্ণীয় নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক দলগুলোর একান্ত আস্থাভাজন অনুগামীর ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

ড. রূপ কুমার বর্মণ, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও আম্বেদকর চর্চা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর