পাকিস্তানে কোরআন অবমাননার অভিযোগে গির্জা ও খ্রিস্টান কলোনিতে হামলা

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 04:08:40

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের খ্রিস্টান বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার অভিযোগে জরানওয়ালা শহরের অন্তত দুটি গির্জা ও ক্রিস্টান কলোনিতে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র জনতা।

সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দেখা গেছে শত শত লোক লাঠিসোঁটা হাতে স্যালভেশন আর্মি চার্চ এবং সেন্ট পল ক্যাথলিক চার্চে হামলা চালাচ্ছে। এ সময় তারা গির্জায় আগুন দেয়। এ ছাড়াও উত্তেজিত জনতা খ্রিস্টান কলোনিতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।

পাঞ্জাব প্রাদেশিক পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ নাভেদ বলেছেন, কর্তৃপক্ষ প্রাদেশিক রাজধানী লাহোর থেকে ১১৫ কিলোমিটার দূরে জরানওয়ালার জসতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

নাভেদ আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সমস্ত আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

পুলিশ পাকিস্তানের বিতর্কিত ধর্মদ্রোহীতা আইনের অধীনে স্থানীয় দুই খ্রিস্টান বাসিন্দার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছে।

এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় সংঘর্ষের কারণে জরানওয়ালা জেলার ফয়সালাবাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংবেদনশীল বিবেচনায় রেখে সেখানে আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জারের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।’

খ্রিস্টান কলোনির কাছেই মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের ছেঁড়া পৃষ্ঠা পাওয়ার পরই ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে।

পবিত্র কোরআনের ছেঁড়া পৃষ্ঠাগুলো স্থানীয় ধর্মীয় নেতার কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি ওই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মুসলমানদের প্রতিবাদ করার অনুরোধ জানান।

স্যালভেশন আর্মি চার্চ থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে একটি মোবাইল ফোনের দোকানের মালিক শাহিদ মেহমুদ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমি সকাল ১০টার দিকে আমার দোকানে পৌঁছে দেখি গির্জার বাইরে কয়েকশ লোক জড়ো হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে, আমি দোকান খোলার ১০ মিনিট পরেই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিই।’

মেহমুদ আরও বলেন, গির্জার কাছে খ্রিস্টান কলোনির চারপাশেও ভিড় জমেছিল। পরে ওই গির্জা এবং কলোনিতে আক্রমণ করা হয়। হামলায় কয়েকটি ছোট গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পাকিস্তানের সংখ্যালঘু জোটের চেয়ারম্যান আকমল ভাট্টি ওই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, বিক্ষুব্ধ জনতা নিরপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত বাড়িতে আগুন দেওয়ার বৈধতা আদায়ের জন্য ধর্মদ্রোহীতা আইন ব্যবহার করেছে।

ভাট্টি বলেন, স্যালভেশন আর্মি চার্চের কাছে খ্রিস্টান কলোনীতে ১৫০টিরও বেশি পরিবার বসবাস করে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার কারণে সেখান থেকে নারী ও শিশুদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জরানওয়ালা থেকে আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যেমন উত্তেজনাপূর্ণ দেখাচ্ছিল, তাতে খ্রিস্টান পরিবারগুলো জরানওয়ালা ছেড়ে কাছাকাছি একটি গ্রামে বা ফয়সালাবাদ শহরে তাদের আত্মীয়দের কাছে যেতে শুরু করে।

ধর্মদ্রোহীতা আইন পাকিস্তানে একটি সংবেদনশীল বিষয়। কারণ, এটি সামান্য অভিযোগের বিপরীতে ব্যাপক সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এই মাসের শুরুতে ধর্মদ্রোহীতার অভিযোগে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের তুরবাতে একজন শিক্ষককে বক্তৃতার সময় তাকে হত্যা করা হয়েছিল।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিক্ষুব্ধ জনতা নানকানার গ্রামীণ জেলার কারাগার থেকে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে কোরআন অবমাননার অভিযোগে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।

অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, পাকিস্তানের ওই ধর্মদ্রোহীতা আইন প্রায়ই ব্যক্তিগত কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর