লাদাখ নিয়ে মোদির দাবি মিথ্যা : রাহুল গান্ধী

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 17:30:06

ভারতে আগামী লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদির দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে লাদাখে চীনের জমি দখলের অভিযোগ জনগণের সামনে আনতে চাচ্ছে কংগ্রেস। বিষয়টি সোমবার (২১ আগস্ট) স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী।

চীনের সেনা লাদাখে ভারতের জমিতে ঢুকে বসে রয়েছে বলে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের এতোদিনের যে অভিযোগ, সেই লাদাখে দাঁড়িয়েই সোমবার নরেন্দ্র মোদিকে ওই ইস্যুতে তোপের মুখে ফেলেন রাহুল।

অনমনোরমা জানিয়েছে রাহুলের দাবি, ভারতীয় ভূখণ্ড চীনের দখলে চলে যায়নি বলে প্রধানমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তা মিথ্যা। যে প্যাংগং হ্রদের একাংশে চীনের সেনা ভারতীয় সেনার দখলে থাকা এলাকায় ঢুকে পড়েছিল, সেই প্যাংগং হ্রদের পাশেই বাবা রাজীব গান্ধীর জন্মদিনে তার ছবিতে পুষ্পার্ঘ্য দেন রাহুল।

তিনি মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের এক ইঞ্চিও জমি চীনের দখলে নেই। এটা একেবারেই সত্য নয়, এখানে যে কাউকে প্রশ্ন করলেই সেটা জানা যাবে।’

তিন বছর আগে গলওয়ানে ভারত ও চীনের সেনার মধ্যে সংঘর্ষের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছিলেন, কেউ ভারতের জমিতে ঢুকেনি। ভারতের সেনার কোনও চৌকিও কারও দখলে নেই। এই বিবৃতির পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, চীনের সেনা ভারতের জমিতে না ঢুকলে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ হলো কোথায়?

রাহুল স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে নিয়ে বলেছেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দারাই বলছেন, তাদের পশুচারণের জমি চীনা সেনার দখলে চলে গেছে। সেটা নিয়ে তারা খুবই উদ্বিগ্ন। এখানকার মানুষ বলছেন, তারা চান জনপ্রতিনিধি।’

রাহুলের কথার প্রতিবাদ জানিয়ে বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘রাহুল গান্ধী, আপনি গলওয়ানে আমাদের সেনাদের সাহস আর আত্মত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন! কেন আপনি ভারতকে অসম্মান করছেন? কেন আপনি চীনের প্রচারকের ভূমিকা পালন করছেন? আর যাই করুন, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল ভাঙার চেষ্টা করবেন না। কংগ্রেস তো বালাকোট আর উরি অভিযানের প্রমাণ চেয়েছিল! ওদের কাছে আর কী-ই বা আশা করব?’

ভারত-বিরোধী কথা বলা রাহুলের স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করে রবিশঙ্কর বলেন, ‘জিজ্ঞেস করতে চাই, ১৯৬২ সালের যুদ্ধের আগে-পরে চীন কতখানি ভূখণ্ড দখল করেছিল, তার মনে আছে কি?’

প্রায় একই সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও। তিনি নেহরু প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘‘যে কংগ্রেস এক সময় ‘হিন্দি-চীনা ভাই ভাই’ স্লোগান তুলেছিল আর ৪৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার জমি চীনকে ছিনিয়ে নিতে দিয়েছিল, তারা আগে নিজেদের দিকে দেখুক।’’

এদিকে রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাস্তবকে অস্বীকার করছেন।

এই সপ্তাহেই ব্রিকস সম্মেলনে দেখা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। গত সপ্তাহে লাদাখের বিবাদ মেটাতে ভারত-চীনের সেনাকর্তাদের ১৯তম বৈঠকেও চীন ডেপসাং ও ডেমচক দুটি এলাকা থেকে নিজেদের সেনা সরাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

তিন বছর আগে আচমকাই গলওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় এলাকায় চীনের সেনা ঢুকে পরার পর থেকেই সেনা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা চলছে। ডেপসাং এলাকায় চীনের সেনাদের উপস্থিতির ফলে ওই এলাকায় নজরদারি চালাতে পারছে না ভারত। ফলে দৌলত বেগ ওল্ডি এয়ার স্ট্রিপ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ডেমচকেও রণকৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চীনের সেনা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে।

এ প্রঙ্গে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের মন্তব্য, নরেন্দ্র মোদি আসলে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে বেশি চিন্তিত। তাই চীনকে ক্লিনচিট দিচ্ছেন।

কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, রাহুল প্যাংগং হ্রদে গেলে মোদি কেন যেতে পারেন না? রাহুল প্যাংগংয়ের পাশে প্রয়াত পিতার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ভারতজোড়ো যাত্রার সময়েই আমার এখানে আসার কথা ছিল। তখন হয়নি। ঠিক করেই রেখেছিলাম, পরে আসব। নুব্রা উপত্যকা আর কার্গিলেও আমি যাব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর