ফের অগ্নিগর্ভ মণিপুর, মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2023-09-30 17:14:36

দুই ছাত্রের অপহরণ এবং নৃশংস খুনের ঘটনায় জনবিক্ষোভের জেরে শুক্রবার নতুন করে অশান্তি ছড়িয়েছে ভারতের রাজ্য মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে।

হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ইম্ফলে খুরাই সাজোর লেইকাই এলাকায় স্থানীয় বিজেপি দলীয় মন্ত্রী এল সুসিন্দ্রোর বাসভবনও তছনছ করেছে উত্তেজিত জনতা। ওই সহিংসতার রেশ দেখা গেছে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালেও।

এ ছাড়াও দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুদ্ধ জনতার সংঘর্ষ হয়েছে ইম্ফলের বিভিন্ন এলাকায়।

মেইতেই জনগোষ্ঠীর দুই ছাত্রের খুনের জেরে চলতি সপ্তাহে নতুন করে অশান্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। গুজব ঠেকাতে গত মঙ্গলবার থেকে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার ইন্টারনেট পরিষেবার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে, কুকি অধ্যুষিত পাহাড়ি অঞ্চলে আগামী ছয় মাসের জন্য জারি থাকবে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (আফস্পা)। কিন্তু, তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে নতুন করে মেইতেই ছাত্র-যুব সংগঠনগুলোর বিক্ষোভে ফের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চলতি সপ্তাহে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে শতাধিক বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে, উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

এর আগে থৌবলে জেলা বিজেপি দফতর এবং ইম্ফলে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পৈতৃক বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে বিক্ষুদ্ধ জনতা।

প্রসঙ্গত, দুই ছাত্রকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় কয়েক ডজন ছাত্র আহত হওয়ার পর ভারতের অশান্ত রাজ্য মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলসহ কিছু জায়গায় এর আগে কারফিউ জারি করা হয়।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, জাতিগত সহিংসতায় নিমজ্জিত হয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যটি।

ওই সংঘর্ষকে ভূমি, চাকরি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য দুটি বৃহত্তম স্থানীয় গোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে একটি তীব্র গৃহযুদ্ধ হিসাবে বর্ণনা করেছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা এল কাইলুন বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, ‘ইম্ফল এবং অন্যান্য কয়েকটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গত বুধবারের সংঘর্ষে ৮০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র জনতা গভর্নিং পার্টির একটি অফিস ভাঙচুর করার পরে পুলিশের প্রতি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। তাই পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।’

রাজ্যটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘পাঁচ দিনের জন্য রাজ্যে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।’

অন্যদিকে, গত ৩ মে প্রথম সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে মণিপুরে এ পর্যন্ত ১৮০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে এবং প্রায় ৫০ হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং, যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একজন নেতা, কথিত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছেন এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কুকি-জো সিভিল সোসাইটি গ্রুপের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাদের কাছে তাত্ক্ষণিক মন্তব্য নেই।

বিরোধী কংগ্রেস দলের নেতারা মোদি সরকারকে তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল শাসিত ওই রাজ্যে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন।

অন্যদিকে, ওই দুই ছাত্রকে অপহরণ করে খুনের ঘটনার তদন্ত করতে গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মণিপুর পৌঁছেছে সিবিআই।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার স্পেশাল ডিরেক্টর অজয় ভাটনগরের নেতৃত্বাধীন দল বিশেষ বিমানে করে বুধবার ইম্ফল পৌঁছেছেন জানা গেছে। এই ঘটনার তদন্তভার আগেই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সরকার।

কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে গত কয়েক মাস ধরেই অশান্তির চাদরে ঢাকা পড়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য।

সূত্রের খবর, গত ৬ জুলাই থেকে ওই দুই ছাত্র নিখোঁজ ছিল। ছবিতে দেখা গেছে, দুই সশস্ত্র আততায়ীর সঙ্গে বসে রয়েছে ওই দুই ছাত্র। অন্য একটি ছবিতে দেখা গেছে, তাদের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, ওই দুই ছাত্রের মৃতদেহ এখনও উদ্ধার করা হয়নি। ওই দুই ছাত্রকে শেষবার দেখা গিয়েছিল বিষ্ণুপুর জেলায়। অভিযোগ, ওই দুই ছাত্রকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই নড়েচড়ে বসেছে মণিপুর সরকার। এক্স হ্যান্ডলে (টুইটার) মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, অপরাধীদের ধরতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানান বীরেন সিং।

এ সম্পর্কিত আরও খবর