ভারতের পার্লামেন্টে হলুদ ধোঁয়া ছড়ানোদের কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ রিকশাচালক!

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-12-15 06:01:04

ভারতের পার্লামেন্টের ভেতরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রকৌশলী, রিকশাচালকও রয়েছেন। তাদের বয়স বিশ থেকে ত্রিশের কোঠায়।

বুধবারের ঘটনায় সাগর শর্মা, নিলম আজাদ, মনোরঞ্জন ডি, অমল সিন্ধে, ভিকি শর্মা ও ললিত ঝা জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদের পাঁচজনই পুলিশের হেফাজতে আছেন।

২৭ বছর বয়সী সাগর শর্মা জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দিল্লিতেই। তবে আদিবাড়ি উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে। সেখানেই বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। সাগরের মা রানি শর্মা জানিয়েছেন, পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ছিলেন না তার পুত্র। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার পর লেখাপড়ায় ইতি টানেন। সাগরের বোন দশম শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর সাগর তার বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।

সাগরের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন বাবার সঙ্গে কাজ করার পর প্রথমে দিল্লি যান। তার পর সেখান থেকে বেঙ্গালুরু। সেখানেই থাকা শুরু করেন। দীর্ঘ সময় সেখানে থাকার পর লখনউয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দিয়েছিলেন বলে দাবি সাগরের আত্মীয়দের। রামজিলাল নগর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর গিরীশ মিশ্রের দাবি, সাগর সম্পর্কে এলাকায় কেউ বিশেষ কিছু জানেন না। তবে তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

সাগরের মা রানি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ছেলের সঙ্গে মঙ্গলবার শেষ কথা হয়েছিল তার। বাড়িতে সাগর জানিয়েছিলেন একটি প্রতিবাদ সভায় যাচ্ছেন। দু’তিন দিন পর ফিরবেন। কিন্তু তার পরই রানি জানতে পারেন সংসদে যে হানার ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনায় ধরা পড়েছেন সাগর। ছেলে যে এই কাজ করতে পারে বিশ্বাসই করতে পারছেন না রানি। তিনি জানান, সাগর রিকশা চালাচ্ছিলেন গত কয়েক বছর ধরে।

সংসদ হানার আর এক অভিযুক্ত মনোরঞ্জন ডি। তিনিও সাগরের সঙ্গে সংসদ ভবনের ভিতরে ছিলেন। মনোরঞ্জনের বয়স ৩৪। বেঙ্গালুরু কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পরেও চাকরি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না তিনি। তবে তার ঘনিষ্ঠদের দাবি, মনোরঞ্জনের মুখে সব সময় সমাজসেবা, ভাল কাজ করার কথাই শোনা গিয়েছে। সেই ছেলে যে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসবে, পরিবার, আত্মীয়স্বজন থেকে পাড়াপড়শিরা কেউই মেলাতে পারছেন না।

মনোরঞ্জনের বাবা দেবরাজ গৌড়া। পেশায় কৃষক। তিনি জানিয়েছেন, মনোরঞ্জন বেশির ভাগ সময় বই নিয়েই পড়ে থাকতেন। তবে তার পাশাপাশি ঘন ঘন মাইসুরু, কখনও বেঙ্গালুরু এবং কখনও আবার দিল্লিও যেতেন। কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, এ বিষয়টি কাউকে বলতেন না বলে দাবি দেবরাজের। তিনি বলেন, মনোরঞ্জন কোনও দামি পোশাক পরতে চাইত না। তবে বই কেনার জন্য টাকা খরচ করত। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বাড়ির কারও সঙ্গে আলোচনা করত না। বাড়ির কারও কাছে টাকাপয়সাও চাইত না। সংসদ হানায় মনোরঞ্জনের নাম উঠে আসার পর তার বাবা বলেন, আমার ছেলে সত্যি যদি দেশবিরোধী কাজ করে থাকে, তা হলে ওর শাস্তি পাওয়া উচিত।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েক বছর ধরে সমাজিক মাধ্যমে খুব সক্রিয় হয়ে ওঠেন মনোরঞ্জন। ওই মাধ্যমে বেশ কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিংহ নামে একটি ফ্যান পেজের সদস্যও মনোরঞ্জন। তার বাবার দাবি, পুত্র কখনও দেশবিরোধী কোনও কাজে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু কেন সংসদে হানা দিতে গেলেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না।

সাগর এবং মনোরঞ্জনের সঙ্গে সংসদ হানায় অন্য অভিযুক্ত নীলম আজাদ। হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা নীলম। এমফিল ডিগ্রিধারী বছর সাইত্রিশের নীলম পাস করেছেন ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (নেট)। সাগর এবং মনোরঞ্জন যখন সংসদের ভিতরে হানা দিয়েছিলেন, তখন নীলম এবং আরও এক সঙ্গী অমল শিন্ডে সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাদের হাতেও রংবোমা ছিল। পুলিশ তাদেরও গ্রেফতার করে। তারা সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর