দুর্ভিক্ষের চরম সীমায় গাজা, ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-01-27 12:03:47

প্রায় চার মাসের পথে গাজা-ইসরায়েল সংঘাত। একের পর এক হাসপাতাল হামলা ও মানবিক সাহায্য প্রবেশে বাধাসহ চলমান ইসরায়েলি বর্বরতায় বিপর্যয়ের ও দুর্ভিক্ষের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে গাজা। তীব্র খাদ্য সংকটে সর্বত্র শুধু ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) অ্যাকশন এইডের এক বিবৃতিতে গাজার চলমান দুর্ভিক্ষের এমন করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাকশন এইড প্যালেস্টাইনের অ্যাডভোকেসি রিহাম জাফারি বলেছেন, ‘আমরা এমন পরিবারের কথা শুনেছি যারা সারা দিনের জন্য এক টুকরো রুটি ভাগ করে খেয়েছে। অনেকেই পশুখাদ্য পিষে খাচ্ছে। নোংরা-দূষিত পানি পান করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ফলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলিদের চলমান বোমা হমালায় চরম দুর্দশায় পড়েছে গাজাবাসী। কিছুদিন আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হেশট্যাগ ‘গাজা স্টারর্ভিং’ ট্রেন্ডে প্রকাশ করা সেই ভিডিওগুলোতে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

তীব্র খাদ্য সংকটে ভয়াবহ অবস্থা অবরুদ্ধ অঞ্চলটির। চারদিকে শুধু ধ্বংসস্তুপ আর ধ্বংসস্তুপ। গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ স্থাপনা। জমি-জমা নেই, মজুত রাখা খাবার শেষ, বেকারিগুলোও বিধ্বস্ত।

ক্ষুধার জ্বালায় কাদঁছে শিশুরা। অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। খাবার নেই, পানি নেই। আবার খাবার পেলেও জ্বালানি সংকটে নেই রান্নার ব্যবস্থা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মেলে না ত্রাণের খাবার। যদিও ভাগ্যক্রমে পাওয়া যায়, তা নিতান্তই সামান্য। যা দিয়ে পেট ভরে না।

ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে এবার পশু-পাখির খাবার খাচ্ছেন অবরুদ্ধ অঞ্চলটির অসহায় নিরীহ বাসিন্দারা। বেঁচে থাকার জন্য ময়দার বিকল্প হিসাবে পশুখাদ্য পিষে খাচ্ছেন অনেকে। 

দাতব্য সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজার ৯৭টি বেকারির মধ্যে মাত্র ১৫টি এখন কার্যকর রয়েছে। এদের মধ্যে সবগুলোই দক্ষিণ অঞ্চলে যা অনেকটা দূর। উত্তর গাজায় বর্তমানে কোনো বেকারি চালু নেই। অন্যদিকে খোলা থাকা বেকারিগুলোতে খাবারের দামও বেশি যা অনেকের সাধ্যের বাইরে।

উত্তর গাজার বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া জননী বিসান (২৯) বলেন, ‘ছেলেকে বুকের দুধ খাওয়াতে অসুবিধা হয়। একটি টিনের দুধের দাম ৭০ বা ৮০ শেকেল। আমি তাকে এক টিন দুধ দিতে পারছি না।’

সাত সন্তানের জনক আবির (৪৭) অ্যাকশন এইডকে বলেন, খাওয়ার জন্য শুধু মসুর ডাল আছে। প্রতিদিন সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের জন্য মসুর ডাল। প্রতিদিন একই জিনিস খাচ্ছে বলে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগতে শুরু করেছে। গাজায় চরম মাত্রায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনওসিএইচএ অনুসারে, ৭ অক্টোবরের পর আগের চেয়ে পানির স্তর এক-দশমাংশের নিচে নেমে গেছে। সুহায়লা নামে আরও একজন বাসিন্দা জানান, বিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়া কঠিন। পানি পেতে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হয় যা ক্লান্তিকর। কখনো কখনো আমার বাচ্চারা পানি ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়ে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরাইলি আক্রমণে গাজায় অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের ৮৫ শতাংশ মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকটে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের অনুসারে, গাজার ৩ লাখ ৩৫ হাজার শিশুর মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সি কোনো শিশিুই পুষ্টি পাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছের অনেকে। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন ৬৪ হাজার ৪৮৭ জন বেসামরিক। ভয়াবহ প্রতিকূলতায় তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছেন গাজাবাসী। সংঘাতের দীর্ঘসূত্রিতা এই সংকটকে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর