খোঁজ মেলেনি রাইসির, চলছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পর কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তাদের সন্ধান পেতে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় চলছে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

রবিবার (১৯ মে) আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন।

সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন ইব্রাহিম রাইসি ও তার সঙ্গে থাকা অন্য কর্মকর্তারা। পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছেছে।

বিজ্ঞাপন

বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং এ প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে–হাশেম ছিলেন।

দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরও বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির অবস্থান শনাক্ত করতে না পারায় তাদের জীবিত উদ্ধার করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা এখনো আশাবাদী। তবে দুর্ঘটনাস্থল থেকে যেসব খবর আসছে তা খুবই উদ্বেগজনক। বৈরী আবহাওয়া ও তীব্র কুয়াশা উদ্ধারকারীদের দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথ জটিল করেছে।’

দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ওই এলাকায় সোমবার রাত পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া থাকতে পারে। স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে রাতভর বৃষ্টি ও ভারী কুয়াশা থাকতে পারে। সোমবার পর্যন্ত এমন আবহাওয়া থাকতে পারেও বলে জানান তিনি।

বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির অবস্থান শনাক্তে সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ভাহিদি। তিনি বলেছেন, ‘অনেকগুলো উদ্ধারকারী দল নিখোঁজ হেলিকপ্টারের সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে। তবে হেলিকপ্টারটি কোথায় বিধ্বস্ত হয়েছে তা জানতে সময় প্রয়োজন। কারণ, সেখানে আবহাওয়া পরিস্থিতি খুবই বৈরী। বৃষ্টির পাশাপাশি তীব্র কুয়াশাও রয়েছে। এতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।’

উদ্ধার অভিযানে যুক্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে ৪০টি উদ্ধারকারী দল। উদ্ধারকারীদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ও ড্রোনও রয়েছে। জরুরি সেবা বিভাগের কর্মী, পুলিশ ও ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও তল্লাশি অভিযানে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি।

তাবরিজ থেকে নির্বাচিত ইরানের একজন সংসদ সদস্য আহমাদ আলি রেজা বেইগি জানিয়েছেন, উদ্ধারকারীরা বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির অবস্থান এখনো শনাক্ত করতে পারেননি। ভারী বৃষ্টি ও কুয়াশা তাদের উদ্ধারকাজকে কঠিন করে তুলেছে।

ইরানের সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার খবর জানা যায় হেলিকপ্টার থেকে আসা একটি জরুরি ফোনকলে। হেলিকপ্টারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা কর্মকর্তারাই ওই ফোনকল করেছিলেন। তবে কথা শেষ হওয়ার আগেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের খবর পাওয়ার পরই শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। তবে এখনো হেলিকপ্টারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

ইরানের সংবাদ সংস্থা ফারস্‌ জানিয়েছে, রাতের অন্ধকারে দুর্গম ওই পাহাড়ি এলাকায় মাত্র পাঁচ মিটার দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। এতে করে উদ্ধারকর্মীরা ব্যাপক জটিলতার মুখে পড়েছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠক করেছেন দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বৈঠক শেষে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কয়েকজন মন্ত্রী তাবরিজে গেছেন। উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করতে দুর্ঘটনাস্থলে গেছেন আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি। আইআরজিসির বিভিন্ন পর্যায়ের কমান্ডার, মন্ত্রী ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে সৌদি আরব, রাশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও ইরাকসহ আরও অনেক দেশ। উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করতে ৩২ সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে তুরস্ক। এসব উদ্ধারকর্মী পাহাড়ে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য বিশেষভাবে দক্ষ।