ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) একটি চূড়ান্ত রীতি ঘোষণা করেছে, যাতে বিভিন্ন ধরনের অভিবাসন আবেদনের জন্য উল্লেখযোগ্য হারে ফি বাড়ানো হচ্ছে।
২০১৬ সালের পর এবারই সবচেয়ে বড় অংকের ফি বাড়লো। আবেদন ভেদে যা কয়েক শতাংশ থেকে শুরু করে বিনিয়োগভিত্তিক গ্রিন কার্ডের আবেদন ফি ২০০ শতাংশেরও বেশি বাড়ছে।
অভিবাসন সংস্থাটির মতে, ফি বাড়ানো মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত খরচের একটি বড় অংশ বের করে আনা সম্ভব হবে এবং নতুন আবেদনগুলো যথাসময়ে প্রক্রিয়াকরণে সহায়ক হবে।
ভিসা ফি বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন কেউ তার স্ত্রী কিংবা স্বামীকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে চাইলে তা ব্যয়বহুল হবে। পাশাপাশি এদেশে অবস্থানকালে দ্বিতীয় ধাপে কেউ স্থায়ী বাসিন্দার (গ্রিন কার্ড) মর্যাদায় যেতে চাইলে উল্লেখযোগ্য হারে ফি গুনতে হবে।
মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জনের আবেদনের ক্ষেত্রেও ফি বাড়ানো হয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য এইচ-১বি ভিসা বা এল ভিসাও (আন্তঃ কোম্পানি ট্রান্সফার) ব্যয়বহুল হতে চলেছে। সবচেয়ে বড় চাপ আসবে যারা বিনিয়োগভিত্তিক গ্রিন কার্ড বা ইবি-৫ ভিসার আবেদন করতে চান তাদের ওপর।
৩১ জানুয়ারি এই ভিসা ফি বাড়ানোর নোটিশ ফেডারেল রেজিস্ট্রিতে প্রকাশ করা হয়। যা আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হবে।
আই-১৩০ ফর্মের মাধ্যমে যারা পারিবারিক পুনর্মিলন বা বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে স্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে যেতে চান তাদের ক্ষেত্রে ফি ২৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৭৫ মার্কিন ডলার করা হয়েছে। কোনো মার্কিন নাগরিক কিংবা গ্রিন কার্ডধারীই তার আত্নীয়কে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসতে ও গ্রিন কার্ড পাইয়ে দিতে এই আবেদন করেন। পরবর্তীতে যদি ওই আত্মীয় স্ট্যাটাস সামঞ্জস্য করতে অর্থাৎ গ্রিন কার্ড পেতে আবেদন করেন তখন তাকে গুনতে হবে ১৪৪০ মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে ভিসা ফি বাড়ানো হয়েছে ১৮ শতাংশ।
এই প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্কভিত্তিক অভিবাসন অ্যাটর্নি সাইরাস ডি মেহতাকে উদ্ধৃত করেছে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম। তিনি বলেছেন, ‘যদি ইউএসসিআইএস মামলাগুলো দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত না করে, তাহলে ফি বাড়ানো অন্যায়। কোনো ব্যক্তি তার দেশে থাকা পিতা-মাতা, স্ত্রী কিংবা নাবালক সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে আবেদন করলে তার প্রক্রিয়াকরণে গড়ে ১৪ মাস সময় নেওয়া ইউএসসিআইএসের জন্য অনুচিত।’
মেহতা এবং অন্যান্য অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফি বাড়ানোর পর আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কতটা ত্বরান্বিত হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আপনি যদি আপনার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকাকে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চান তাহলে ফর্ম আই-১২৯এফ-এর জন্য বর্ধিত ফি গুনতে হবে। যা এখন ২৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৫৩৫ ডলার থেকে ৬৭৫ মার্কিন ডলার করা হয়েছে।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) অবশ্য মনে করে না আই-১২৯ ফর্মের মাধ্যমে আবেদন ফি বাড়িয়ে দেশের বাইরে বিয়েকে উৎসাহিত করা যাবে। বরং কোনো যুগল যদি বাইরে বিয়ে করে তাহলে আই-১২৯ এর পরিবর্তে তারা আই-১৩০ আবেদনের মধ্য দিয়ে স্ত্রী কিংবা স্বামীকে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আসতে চাইবে। চূড়ান্ত রীতিতে আই-১৩০'র ক্ষেত্রে ফি বেড়ে ৬২৫ ডলার হচ্ছে আর পেপার ফাইলিংয়ের ক্ষেত্র তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬৭৫ ডলার। সুতরাং দেশের বাইরে বিয়ে, এমন কোনো সাশ্রয় নিশ্চিত করবে না।
ন্যাচারালাইজেশনের সিদ্ধান্তের শুনানিসহ আমেরিকান নাগরিক হওয়ার আবেদনও এখন থেকে আরও ব্যয়বহুল হবে। তবে বায়োমেট্রিক সার্ভিসের মাধ্যমে ন্যাচারালাইজেশনের অনলাইন আবেদন ফি সামান্য কমিয়ে ৭২৫ ডলার থেকে ৭১০ ডলার করা হচ্ছে।
বিনিয়োগ-সম্পর্কিত গ্রিন কার্ড আবেদনের ফি পরিবর্তন:
ইমিগ্রেশনের ফি বাড়ানোর সবচেয়ে বড় অংকটি ধার্য করা হচ্ছে ইবি-৫ এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারী ভিসা আবেদনকারীদের জন্য। এটি একটি বিনিয়োগ-সম্পর্কিত গ্রিন কার্ড প্রোগ্রাম। এক্ষেত্রে আবেদনকারীদের আই-৫২৬ এ প্রাথমিক পিটিশনে ১১,১৬০ মার্কিন ডলার দিতে হবে। এক্ষেত্রে ফি বেড়েছে ২০৪ শতাংশ। পরে স্থায়ী অভিবাসনে যেতে আই-৮২৯ ভিসা আবেদনে তাদের গুনতে হবে ৯৫৩৫ ডলার। যা আগের তুলনায় বাড়ছে ১৫৪ শতাংশ।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের প্রাথমিক আবেদন ফাইল করার জন্য অপেক্ষা না করে ১ এপ্রিল থেকে এই ফি বৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার আগেই আবেদন করা উচিত।
কর্মসংস্থান সংক্রান্ত ফি পরিবর্তন:
এইচ-১বি ক্যাপ ভিসার জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানো হচ্ছে ২০০০ শতাংশ। এইচ১-বি'র ই-রেজিস্ট্রশেন ১০ ডলার জমা দিতে হয়, যা বাড়িয়ে ২১৫ ডলার কথা হচ্ছে। তবে, এই উচ্চ হার এই বছরের এইচ-১বি রেজিস্ট্রেশনের জন্য কার্যকর হবে না। এই ভিসা আবেদন আগামী ৬ মার্চ শুরু হয়ে ২২ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
তবে এইচ১-বি আবেদনের ফি অবশ্যই বাড়বে। এই আবেদন শুরু হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে। যেখানে আবেদন ফি বর্তমান ৪৬০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭৮০ ডলার করা হচ্ছে। আর এল ওয়ান আবেদন (আন্তঃ কোম্পানি ট্রান্সফার) ফি ৪৬০ ডলার থেকে বেড়ে ১৩৮৫ ডলার করা হচ্ছে। তবে বিশেষ কিছু ছোট কোম্পানি ও নন প্রফিটের ক্ষেত্রে এই ফি অপেক্ষাকৃত কম হবে।
চূড়ান্ত রীতিতে অ্যাসাইলাম প্রোগ্রামের আওতায় আবেদনে অতিরিক্ত ৬০০ ডলার গুনতে হবে। প্রতিটি আই-১২৯ ও আই-১৪০ ফর্মের ক্ষেত্রে এই ফি ধার্য করা হয়েছে। ননপ্রফিট আবেদনকারীরা নতুন এই ফি রেয়াদ পাবেন আর অপেক্ষাকৃত ছোট কোম্পানির ক্ষেত্রে এই ফি ধরা হবে ৩০০ ডলার।
ইউএসসিআইএস তার বিবৃতিতে বলেছে, ফি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সংস্থাটির বছরে ৭৩০ মিলিয়ন ডলার খরচ তুলে আনতে পারবে। আর সক্ষমতা বাড়াতে বাজেট বরাদ্দ করতে পারবে। এই বর্ধিত ফি কার্যকরের মধ্য দিয়ে নতুন রাজস্ব আয় হবে তা দিয়ে ইউএসসিআইএস উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রয়োগে গ্রাহক সেবার মান বাড়াবে এবং আটকে থাকা আবেদনগুলো দ্রুত ছেড়ে দিতে পারবে।