খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের আলোচিত হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার বিদ্যমান টানাপোড়েনের মধ্যেই, ভারতকে কানাডার নির্বাচনের ক্ষেত্রে 'বিদেশি হুমকি' হিসাবে অভিযোগ করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
কানাডিয়ান সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের একটি ডিক্লাসিফাইড ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে এই অভিযোগ করা হয়েছে। সব তথ্য অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রুডো প্রশাসন।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে নয়াদিল্লিতে ২০২৩ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর জি-২০ সম্মেলনের এক ফাঁকে বৈঠক হয়। এ সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি- কানাডায় ভারতবিরোধী উগ্রপন্থিদের অব্যাহত তৎপরতা নিয়ে কঠোর উদ্বেগ জানিয়েছেন মোদি। তারা বিচ্ছিন্নতাবাদকে উৎসাহিত করছেন।
অন্যদিকে উগ্রপন্থা এবং কানাডায় বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের ট্রুডো বলেন- আলোচনায় দুটি ইস্যুই উঠেছিল। কানাডা সব সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিবেকের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে। আমাদের কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সহিংসতার বিরুদ্ধে, ঘৃণার বিরুদ্ধে সবসময় আমাদের অবস্থান।
কিন্তু দেশে ফিরে গিয়ে ১৯শে সেপ্টেম্বর হাউজ অব কমন্সে ট্রুডো ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যায় ভারত সরকার এবং ‘র’ জড়িত। এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ আছে। তখন থেকেই শুরু হয় উত্তেজনা। প্রথমদিকে বিষয়টি দুই দেশের সরকারের ভেতরকার ইস্যু হলেও তা এখন সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে গেছে।
ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের জন্য ভারতকে দোষারোপ করার প্রতিক্রিয়ায় জাস্টিন ট্রুডোকে কঠোর তিরস্কার করেন নরেন্দ্র মোদি। মূলত এরপর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।
সে জের ধরেই কানাডার নির্বাচনে সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ করতে পারে ভেবে ভারতকে একটি 'বিদেশী হুমকি' হিসাবে নাম দিয়েছে অটোয়া। এরই মধ্যে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আরেক শিখ নেতাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিপক্ষে। যদিও নতুন অভিযোগের বিষয়ে ভারত সরকার এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
২০২২ সালের অক্টোবরে 'বিদেশী হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচন: একটি জাতীয় নিরাপত্তা মূল্যায়ন' শিরোনামের প্রতিবেদনেও ভারতকে 'হুমকি' বলে অভিহিত করেছে। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিদেশী হস্তক্ষেপ কানাডার গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে বলে সতর্কতা জানানো হয়। বৈদেশিক হস্তক্ষেপ ঐতিহ্যগত কূটনীতি থেকে সরে গিয়ে গোপনীয়তা এবং প্রতারণার নীতি ব্যবহার করে জনসাধারণকে এবং নীতি-নির্ধারণকে প্রভাবিত করে বলে জানানো হয়।
এর আগে এমন অভিযোগ আনা হয়েছিল চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এই প্রথম নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করেছে কানাডা।