ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সেনা পাঠালে রাশিয়া এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে বলে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সতর্ক করেছে ক্রেমলিন।
এনডিটিভি জানিয়েছে ক্রেমলিনের ওই সতর্ক বার্তার কারণ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর দরজা খুলে দিয়েছেন।
যদিও তিনি সতর্ক করেছেন যে, এই পর্যায়ে এই ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে কোনও ঐকমত্য ছিল না। কারণ, মিত্ররা কিয়েভে আরও যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহের প্রচেষ্টা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
মাখোঁর মন্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যাটো দেশগুলো থেকে ইউক্রেনে কিছু সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নতুন একটি উপাদান।’
ন্যাটো সদস্যরা ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য তাদের সেনা পাঠালে সরাসরি রাশিয়া-ন্যাটো সংঘর্ষের ঝুঁকি কী হবে জিজ্ঞাসা করা হলে পেসকভ বলেন, ‘সেক্ষেত্রে কোনও সম্ভাব্যতা নয়, রাশিয়া-ন্যাটোর মধ্যে অনিবার্য সরাসরি সংঘর্ষের কথাই বলতে হবে।’
এদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের তৃতীয় বছরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন এবং কানাডার জাস্টিন ট্রুডোসহ পশ্চিমা নেতারা কিয়েভের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে ইউক্রেন সফর করেছেন।
ভন ডের লেন, ট্রুডো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু প্রতিবেশী গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ড থেকে একটি রাতের ট্রেনে ইউক্রেনে পৌঁছান।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভের গোস্টোমেল বিমানবন্দরে একটি উন্মুক্ত বার্ষিকী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা ৭৩০ দিন ধরে লড়াই করছি। আমরা আমাদের জীবনের সেরা দিনে জিতব।’
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান অলেক্সান্ডার সিরস্কিও বিদ্রোহী সুরে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, ঐক্যই আমাদের বিজয় এবং এটি অবশ্যই ঘটবে। কারণ, আলো সবসময় অন্ধকারকে জয় করে!’ আল জাজিরা জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই বার্তা দেন সিরস্কি।
চলতি বছর জি-৭ এর সভাপতিত্বকারী দেশ ইতিলির পক্ষে মেলোনি, প্রধান অর্থনীতির গোষ্ঠীর নেতারা এবং জেলেনস্কির মধ্যে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) একটি ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজনের কথা রয়েছে।
ওই আলোচনার সম্ভাব্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনের জন্য যৌথ অস্ত্র ক্রয়।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আরও বেশি দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনের পাশে রয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা অর্থনৈতিক, সামরিক এবং নৈতিকভাবে কিয়েভের পাশে আছি। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের পাশে আছি, যতক্ষণ না দেশটি চূড়ান্তভাবে দখলমুক্ত হয়।’
কিয়েভে পৌঁছানোর আগে এক বিবৃতিতে ট্রুডো বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা আমাদের যৌথ ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছে। তারা বিশ্বকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করছে যে, গণতন্ত্র বাঁচার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং জয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু যুদ্ধ চলছে, সেটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আর এ কারণেই কানাডা প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘আরও সমর্থনের পথে ইউক্রেন। দেশটি ন্যাটোতে যোগ দেবে। কিন্তু, ইউক্রেনকে সেই দিনের জন্য প্রস্তুত করার পাশাপাশি এখনই কিয়েভের পাশে দাঁড়ানো অব্যাহত রাখবে ন্যাটো।’
এদিকে, ব্রিটেন ইউক্রেনের জন্য জরুরী প্রয়োজনে গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবারুদ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করার জন্য একটি নতুন ৩১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।