ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের নির্বাচনের ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ পূর্ণাঙ্গভাবে, স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া স্থগিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ৩১ জন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য। এ বিষয়ে তারা প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বুধবার (২৮শে ফেব্রুয়ারি) যৌথভাবে একটি চিঠি লিখেছেন। এতে পাকিস্তানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে এবং দেশটির গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠির মাধ্যমে সামরিক এবং অন্যরকম সহযোগিতা স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেগ কেসার-এর সরকারি ওয়েবসাইটে এ কথা জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টও দিয়েছে। টেক্সাসের ডেমোক্রেট গ্রেগ কেসারের ওয়েবসাইটে বলা হয়, পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ৮ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আগে এবং পরে জালিয়াতির অভিযোগে চিঠিতে যৌথভাবে উদ্বেগ জানিয়েছেন কংগ্রেসের ওই সদস্যরা।
এতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, নির্বাচনে হস্তক্ষেপের পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের নতুন সরকারকে যেন স্বীকৃতি না দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখা হলে তাদেরকে মুক্তি দিতে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এসব ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়া এবং এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে পাকিস্তানে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে। এতে আরও দাবি জানানো হয়েছে যে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার করে বলতে হবে- মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রে বাধা অথবা অন্য যেকোনো দুর্নীতির বিষয়ে জবাবদিহিতা চায় যুক্তরাষ্ট্রের আইন।
গ্রেগ কেসারের ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, নির্বাচনের আগেই ভোট জালিয়াতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানি জনগণ ব্যাপক সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে তার স্বার্থেই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এই নির্বাচনের ফল পাকিস্তানের কোনো অভিজাত শ্রেণি বা সামরিক বাহিনীর নয়- দেশটির জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
গ্রেগ কেসার বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই তার মিত্রদেরকে উচ্চ মানসম্পন্ন অবস্থায় রাখতে হবে। তাই একটি বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নির্বাচনের ফলকে স্বীকৃতি দেয়া উচিত হবে না।
কংগ্রেসওম্যান সুসান ওয়াইল্ড বলেন, দেশে এবং দেশের বাইরে গণতন্ত্রের পক্ষে আমাদের প্রতিশ্রুতির সর্বোচ্চ মানদণ্ডের প্রতিশ্রুতির প্রতি আমাদেরকে শক্তিশালী থাকতে হবে। পাকিস্তানে নতুন সরকার হবে- দেশটিতে জনগণ প্রকৃতপক্ষে যার জন্য ভোট দিয়েছেন তার প্রতিফলন। এখন সময় হচ্ছে পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে সমস্বরে কথা বলা উচিত যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সদস্যরা হলেন- টেক্সাস-৩৫ এর প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেগ কেসার, পেনসিলভ্যানিয়ার সুসান ওয়াইল্ড, ভার্জিনিয়ার ডনাল্ড বেয়ার, নিউ ইয়র্কের জামাল বোম্যান, কোরি বুশ, ইন্ডিয়ানার আন্দ্রে কারসন, ক্যালিফোর্নিয়ার জুডি চু, নিউ ইয়র্কের ইভেত্তে ক্লার্ক, পেনসিলভ্যানিয়ার মেডেলিন ডিন, টেক্সাসের লয়েড ডোগেট, ভেরোনিকা এসকোবার, ইলিনয়ের জেসাস চুই গার্সিয়া, ওয়াশিংটনের ইলিয়ানর হোমস নর্টন, নেভাদার স্টিভেন হর্সফোর্ড, ওয়াশিংটনের প্রমীলা জয়াপাল, জর্জিয়ার হ্যাঙ্ক জনসন, ক্যালিফোর্নিয়ার রো খান্না, ইলিনয়ের রাজা কৃষ্ণমূর্তি, ওহাইওর গ্রেগ ল্যান্ডসম্যান, ক্যালিফোর্নিয়ার বারবারা লি, পেনসিলভ্যানিয়ার সামার লি, ম্যাচাচুসেটসের জিম ম্যাকগভার্ন, মিনেসোটার ইলহান ওমর, নিউজার্সির ফ্রাঙ্ক প্যালোন, মেডিসনের জেমি রাসকিন, ইলিনয়ের জ্যান শকাওয়াস্কি, মিশিগানের রাশিদা তলাইব, মেরিল্যান্ডের ডেভিড থ্রোন, টেক্সাসের মার্ক ভেসি, নিউ ইয়র্কের নিদিয়া ভেলাজকুয়েজ এবং নিউজার্সির বোনি ওয়াটসন কোলম্যান।
এই চিঠি অনুমোদন করেছে সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড পলিসি রিসার্স, কমিউনিটি অ্যালায়েন্স ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস, ফার্স্ট পাকিস্তান গ্লোবাল, গ্লোবাল পিস সিকার্স, জাস্ট ফরেন পলিসি, এমপাওয়ার চেঞ্জ অ্যাকশন ফান্ড, নাউ অর নেভার এবং সেভ পাকিস্তান জোট।