দেড় শতাধিক ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার আসামি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একাধিক মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে তিনি এখন কারাগারে।
এ অবস্থায় দেশটির সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত হয়েছে নতুন সরকার। বিবিসিজানিয়েছে, এই সরকারকে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ‘পরাজিতদের জোট’ সরকার বলে অভিহিত করেছে।
ইমরান খান কারাগারে থাকলেও গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের তার দলের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চমক দেখিয়েছেন। প্রযুক্তির ব্যবহার করে ইমরান যেভাবে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন, এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে তিনি শীর্ষ জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি এখন পুরো দেশের মধ্যে বিখ্যাত বন্দিও বটে, যার নম্বর ৮০৪।
নির্বাচনের আগে এই নম্বরটি হয়ে উঠেছিল পিটিআই সমর্থক প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম স্লোগান। এর মানে ইমরানের জনপ্রিয়তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পেরেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ জন্য এক দল তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন নেতাকর্মীর ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য।
কারণ, তারাই বন্দি ইমরানের বক্তব্যকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। খোলা হয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আর ওয়েবসাইট। এর মাধ্যমে তারা খানের বক্তব্য কৃত্রিমভাবে তৈরি করে তাঁকে পৌঁছে দিয়েছেন কোটি কোটি ভোটারের কাছে। বিশেষ করে যুবকদের কাছে।
এর সুফল ঘরেও তুলেছেন তারা। কিন্তু ভোটে ব্যাপক জালিয়াতির কারণে পুরো সুফল তোলা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ পিটিআইয়ের।
শেহবাজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রী করে পাকিস্তানের যে নতুন সরকার রবিবার (৩ মার্চ) যাত্রা শুরু করেছে, সেটিকে নড়বড়ে সরকার বলছেন বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তানের লেখক ও সাংবাদিক মোহাম্মদ হানিফ লিখেছেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলো স্থিতিশীলতা নিয়ে আসার কথা ছিল। দেশের মুদ্রাস্ফীতি ও তিক্ত রাজনৈতিক বিভাজন মোকাবিলা করার জন্য এটা খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, এর পরিবর্তে একটি সংখ্যালঘু সরকার এসেছে, যা মোটেই শক্তিশালী নয়। যারা জোট করেছেন, তারাও জোট করতে অনিচ্ছুক ছিলেন।
এই নির্বাচনে গেরিলা ধাঁচের প্রচারণা চালিয়েছিলেন ইমরান সমর্থকরা। প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারা ভোটের মাঠে এতোটাই শক্তিশালী ছিলেন যে, কারচুপির মাধ্যমে তাদের আটকে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কৌশলের বিষয়ে ভোটারদের প্রতিক্রিয়া ছিল অভূতপূর্ব। তারা বলেছিলেন, ‘আপনারা যতোটা ভাবছেন যে, আমরা কিছু বুঝি না, আসলে আমরা ততোটা বোকা নই। আমাদের হাতে ব্যালট আছে।’
পাকিস্তানের অধিকাংশ রাজনীতিবিদকে কোনও না কোনও সময়ে কারাগারে থাকতে হয়েছে। তবে ইমরান খানের চেয়ে বেশি মজা আর কেউ পেয়েছেন বলে মনে হয় না। কারণ তিনি জেলে থেকেই নির্বাচনী বিজয় অর্জন টেনে এনেছেন।
অন্যদিকে, তাকে খেলতে হয়েছে সেনাবাহিনীর কৌশলের সঙ্গেও। সেনাবাহিনী বোঝাতে চেয়েছিল ইমরান খান এবং তার দল শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু, সেই কৌশলও ভেস্তে গেছে। কারণ, নির্বাচনের আগে দলটি দ্বিতীয় সারির নেতা এবং স্থানীয় বিশ্বস্তদের দিয়ে টিম গঠন করে বিপর্যস্ত দলের বিজয়ের প্রচারাভিযান পরিচালনা করেছে।
তারা নিশ্চিত ছিল, তাদের নেতাকে ক্ষমতায় ফিরে যেতে দেওয়া হবে না। কিন্তু তারা ভোটের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, সেনাবাহিনীর চাপ থাকলেও তারা ইমরানকে ছেড়ে যাননি।
ইমরান খান পদচ্যুত হওয়ার পর তিনি শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপরই নয়, সেনাবাহিনীর প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এটিও তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।
পিটিআই সমর্থকরা বিরোধী দলে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু, ইমরান খান তার রাজনীতি সংসদে নয়, বরং রাজপথে, জনসভা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খেলতে পছন্দ করেন। নতুন সরকারকে ‘পরাজিতদের জোট’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে পিটিআই। আসলে এটি এমন দলগুলোর জোট, যারা নির্বাচনে ইমরানের কাছে পরাজিত হয়েছে।
অনেকে মনে করেন, কারাগারে থাকা ইমরান আরও পরিণত রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন।