রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তিন দিন ভোট গ্রহণের শেষ দিন আজ রোববার। কঠোর নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে শুক্রবার (১৫ মার্চ) থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও ছয় বছরের জন্য দেশটির ক্ষমতায় আসতে চলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন আবারও জয়ী হবেন এবং তার পঞ্চম মেয়াদ নিশ্চিত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কোনো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকায় ফলাফল পুতিনের দিকে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ভোটের শেষ দিনে পুতিন বিরোধরা ভোটকেন্দ্রগুলোয় বড় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। যে বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নুন এগেইনস্ট পুতিন’ বা ‘পুতিনের বিরুদ্ধে দুপুর’।
গত মাসে রাশিয়ার একটি কারাগারে মারা যাওয়া দেশটির বিরোধী দলের নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি এভাবে পুতিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরিকল্পনা করেছিলেন। পরে নাভলনির স্ত্রী ইউলিয়া তার স্বামীর সমর্থক এবং পুতিন বিরোধীদের ভোটের চূড়ান্ত দিন রোববার দুপুরে দেশজুড়ে একই সময়ে সবাইকে ভোটকেন্দ্রে এসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের অস্তিত্ব ও শক্তির প্রদর্শন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনই জিতবেন সবাই জানে, তাহলে কেন ক্রেমলিন এত আয়োজন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করছে? আর এই নির্বাচন থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সত্যিকারের জনপ্রিয়তার ধারণা পাওয়া যাবে কি?
২০০০ সাল থেকে রাশিয়ার ক্ষমতায় ভ্লাদিমির পুতিন। প্রথমে তার পূর্বসূরি বরিস ইয়েলতসিনের দ্বারা ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন, আর ২০০০ সালের মার্চে তিনি প্রথমবার নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
২০০৮ থেকে ২০১২, এই সময়টায় তিনি তার ভূমিকা বদলে নেন, সেসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার বসলেও ক্ষমতা পুরোপুরি নিজের কাছে রাখেন। সে সময়টায় রাশিয়ার সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্ট টানা দুবার ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। এ কারণেই তিনি ভূমিকা বদলে আবারও নতুন করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে আসনেও যাত্রা শুরু করেন।
২০২০ সালে সংবিধানের সেই নিয়মেও পরিবর্তন আসে। এখন বহুল প্রচলিত বিশ্বাস হল প্রেসিডেন্ট পুতিন ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন।
আর সে পর্যন্ত থাকলে তিনি হবেন রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা শাসক। তিনি পেছনে ফেলবেন কম্যুনিস্ট নেতা জোসেফ স্ট্যালিন ও অষ্টাদশ শতকের সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেটকে, যারা দুজনেই ৩০ বছরের বেশি ক্ষমতায় ছিলেন। এই নির্বাচনে জয়ী হলে ২০০ বছরের ইতিহাসে রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি প্রেসিডেন্ট হবেন পুতিনই।
নির্বাচনে রুশ নেতা নিকোলাই খারিটোনভ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দলটি রাশিয়ার দ্বিতীয় জনপ্রিয় দল হিসেবে এর মর্যাদা ধরে রেখেছে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া অন্য দুই প্রার্থী হলেন জাতীয়তাবাদী এলডিপিআরের লিওনিড স্লুটস্কি এবং নিউ পিপলের ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ।