হামাসের সামরিক নেতা মারওয়ান ইসা আসলে কে

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-03-20 12:50:11

ইসরায়েলের ‘মোস্ট ওয়ান্টড’ তালিকায় নাম ছিল মারওয়ান ইসার। ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হামাসের ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলায় তিনি নিহত হন।

সোমবার (১৮ মার্চ) হোয়াইট হাউস এ খবর জানিয়ে বলেছে, হামাসের তিন নম্বর সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন মারওয়ান ইসা।

এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ইসাকে হত্যা করার পর হামাসের অন্যান্য নেতা পালিয়ে গেছেন। সম্ভবত, গাজা উপত্যকার মাটির নিচে টানেলের আরো ভেতরে চলে গেছেন।

এ বিবৃতিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের যৌথ বিবৃতির একটি অংশ বলে জানা গেছে।

মারওয়ান ইসা ‘দ্য শ্যাডো ম্যান’ হিসেবে বহির্জগতে পরিচিত ছিলেন। ইসরায়েলি হামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে তিনি সবসময় লুকিয়ে থাকতেন। দশকের পর দশক এভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

ইসা হামাসের প্রভাবশালী নেতাদের একজন ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি বছরের পর বছর হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের একজন হিসেবে কাজ করে এসেছেন।

ইসরায়েলের তিন তিনবার হামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হন ইসা। ২০০৬, ২০১৪ এবং ২০২১ সালে ইসরায়েলের হামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পেরেছিলেন মারওয়ান ইসা। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল।

এদিকে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ১১ মার্চ জানায়, মারওয়ান ইসাকে হত্যা করতে ৯ ও ১০ মার্চ গাজার মাটির নিচের টানেল লক্ষ করে আকাশ পথে হামলা চালানো হয়। কিন্তু কোনোবারই তারা তাকে হত্যা করতে সফল হয়নি তারা।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী আরো জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলের গ্রামের হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম ছিলেন ইসা। এছাড়াও বলা হয়েছে, হামাসের সেন্ট্রাল ক্যাম্পস বিগ্রেডের সাবেক কমান্ডার গাজী আবু তমাকেও হত্যার উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর। কিন্তু তাকে তারা হত্যা করতে পারেনি।

এদিকে, মারওয়ান ইসার হত্যার বিষয়ে হোয়াইট হাউসের বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ইসরায়েলের রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, হামলায় ইসা নিহত হয়েছেন কি না, সে ব্যাপারে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে ইসার নিহত হওয়ার বিষয়ে হামাস এখনো তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

হামাসে ইসার ভূমিকা
হামাসের সামরিক শাখা ইজেডাইন আল কাশেম ব্রিগেডের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে মারওয়ান ইসা ব্রিগেড চিফ মোহাম্মেদ দাইফের ডানহাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ধারণা করা হয়, হামাসের এক শীর্ষ নেতা আহমেদ আল জাবারিকে হত্যার পর মারওয়ান ইসা সংগঠনের শীর্ষনেতা হয়ে ওঠেন। ইসা ব্রিগ্রেডের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় হামাসের সামরিক কাউন্সিল ও রাজনৈতিক কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন।

হামাসের নিহত নেতা মারওয়ান ইসা

ইসার নাম ‘বিশ্ব সন্ত্রাসী’র তালিকায় লিপিবদ্ধ ছিল। ১৯৮০ সালের শেষদিকে ফিলিস্তিনে প্রথম ইন্তিফাদহ’র সময় তিনি ইসরাইলে ৫ বছর জেলে কাটান। এর পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসাকে ১৯৯৭ সালে আটক করে রাখে। ২০০০ সালের দ্বিতীয় ইন্তিফাহদ’র সময় তিনি মুক্তি পান।

২০২১ সালে কাতারভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইসা জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলি সার্জেন্ট গিলাড শলিটের মুক্তির বিনিময়ে এক হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন।

ইসা নিজেকে সবসময় নিজেকে আড়ালে রাখতেন এবং খুব কমই সাধারণ মানুষের সামনে হাজির হতেন।

১৯৬৫ সালে মধ্য গাজার বুরোজি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন মারওয়ান ইসা। যদিও তার পরিবার বর্তমান ইসরায়েলের আসেকেলন এলাকায় বসবাস করতো। নিশ্চিত করে জানা যায়, তার দুই সন্তান। ২০০৯ বড় সন্তান বরাহ চিকিৎসার জন্য গাজা উপত্যকা থেকে মিশর যেতে চাইলে অনুমতি দেয়নি মিশর। এরপর সে মারা যায়। তার দ্বিতীয় সন্তান মুহাম্মাদ ২০২৩ সালে ইসরায়েলের চালানো এক হামলায় মারা যায়।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মারওয়ান ইসার বয়স ৫৮ বা ৫৯ বছর। - দ্য ন্যাশনাল নিউজ অবলম্বনে

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর