আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের ৬ সপ্তাহব্যাপী লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে গতানুগতিক প্রচারণার পাশাপাশি সম্প্রতি শুরু হয়েছে ডিপফেক ভিডিও ব্যবহার করে ‘ভুতুড়ে’ প্রচারণা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যম এএফপি সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন এক রাজনীতিবিদ। অথচ নতুন করে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে তার ভিডিও, শোনা যাচ্ছে অডিও মেসেজ। এমন ঘটনাই দেখা গেছে ভারতে।
ডিপফেকের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে নকল ভিডিও তৈরি করা হয়, এবং তা এমনই নিখুঁত যে তা আসল না নকল বোঝা যায়। ভারতে নির্বাচনে প্রচারণার জন্য তৈরি করা হচ্ছে এমন সব ডিপফেক ভিডিও, যাতে বক্তব্য দিচ্ছেন মৃত জনপ্রিয় রাজনীতিবিদরাও।
বিশেষ করে দক্ষিণের তামিল নাড়ু রাজ্যে এ ধরনের প্রচারণার ধুম দেখা গেছে। ২০১৬ সালে মারা গেছেন অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া জয়ললিতা। কিন্তু এই নির্বাচনে তার একটি ভয়েস ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন তিনি।
‘বর্তমান রাজ্য সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অকর্মণ্য,’ তার ডিজিটাল কণ্ঠস্বর বলে। ‘আমার পাশে দাঁড়ান। আমরা জনগণের পক্ষে।’
এদিকে জয়ললিতার বিরোধী পক্ষও কম যায় না। তার প্রতিপক্ষ করুণানিধি ২০১৮ সালে মারা যান। কিন্তু এ বছর নির্বাচনী প্রচারণায় তার বেশকিছু ডিপফেক ভিডিও ব্যবহার হচ্ছে। এগুলোতে দেখা যায়, তিনি বর্তমান রাজ্য সরকারের প্রশংসা করছেন।
করুণানিধির এই ডিপফেক ভিডিও তৈরি করেছে চেন্নাইয়ের ফার্ম মুওনিম। তার প্রতিষ্ঠাতা সেনথিল নায়াগাম বলেন, অতীতের জনপ্রিয় নেতাদের আবারও সামনে নিয়ে এসে অভিনব উপায়ে মনোযোগ টানার চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। তা ছাড়া সমাবেশের জন্য গুচ্ছের টাকা খরচ করা লাগে না, ফলে এই উপায়ে প্রচারণা অনেকটা সাশ্রয়ীও বটে।
সম্প্রতি ভারতের রাজধানী অঞ্চল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আবগারি দুর্নীতি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে দেশটির একটি আদালত। তার একটি ডিপফেক ভিডিও প্রকাশ করেছে বিজেপি। এতে দেখা যায়, কারাগারে বসে গিটার বাজিয়ে গান করছেন কেজরিওয়াল।
ভারতে ‘দ্যা ইন্ডিয়ান ডিপফেকার’ নামের একটি কোম্পানি আছে। কোম্পানির প্রধান দিব্যেন্দ্র জাদুন জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচুর কাজ পাচ্ছে তার কোম্পানি। ভয়েস ক্লোনিং, চ্যাটবট, এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে প্রচুর মানুষের মাঝে এসব ডিপফেক ছড়িয়ে দেওয়া- এসব কাজ করে থাকে কোম্পানিটি।
জাদুন জানিয়েছেন, অনৈতিক উপায়ে ব্যবহার হতে পারে, এমন ডিপফেক তৈরির অর্ডার নেন না তিনি। তবে অনেক সময় তিনিও দ্বন্দ্বে ভোগেন, যা করছেন, তা কী ঠিক করছেন?
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুরু থেকেই প্রযুক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন। কিন্তু একজন মৃত রাজনীতিবিদের কণ্ঠস্বর এবং চেহারা নকল করে প্রচারণা চালানো কতটা নীতিগত, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
গত নভেম্বরে দেশটির যোগাযোগমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ বলেছিলেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি এসব ডিপফেক।