আরেকটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে হামাসকে ‘বড় বাধা’ বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপরই গাজার রাফাহতে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
শহরটির বাসিন্দারা রয়টার্সকে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরেকটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসকে সবচেয়ে বড় বাধা উল্লেখ করার পরপরই দক্ষিণ গাজার রাফাহ’র রাস্তায় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করছে হামাস যোদ্ধারা।
এদিকে, ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তেও উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহ’র সামরিক অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ভাগ্য নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা এবং গত মে মাসের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী ওই মাসেই রাফাহতে স্থল অভিযান শুরু করে।
বৃহস্পতিবার রাফাহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক আগুন লেগেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
বাসিন্দাদের একজন এএফপিকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি কামান এবং যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও যুদ্ধবিমান, অ্যাপাচি (হেলিকপ্টার) এবং কোয়াডকপ্টার থেকে খুব তীব্র গোলাবর্ষণ হচ্ছিল। যার সবগুলোই রাফাহ শহরের পশ্চিমে আঘাত হেনেছে।’
হামাস বলেছে, তাদের যোদ্ধারা মিশর সীমান্তের কাছে শহরের রাস্তায় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে লড়াই করছে।
ইতালিতে একটি জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে বাইডেন গাজা যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তিতে হামাসকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা বলে অভিহিত করেছেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন,‘আমি একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, জি-৭ এবং ইসরায়েলিদের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা হল হামাস এতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেছে যদিও তারা কিছু দাবি জমা দিয়েছে।’
অন্যদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৩৭,২৩২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ইসরায়েল যখন রাফাতে স্থল অভিযান শুরু করে তখন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু, গত মে মাসের শেষের দিকে বাইডেন একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য একটি নতুন প্রচেষ্টা শুরু করেন।
গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করে ওই মার্কিন খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেছেন, জি-৭ নেতারা প্রয়োজনীয় সম্মতি দেওয়ার জন্য হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশরকে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে হামাস।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, হামাস বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে কিছু সংশোধনী এনেছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি এই সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরে ছিলেন।
হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেছেন, হামাস একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চেয়েছে। কিন্তু, এসব দাবি বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল।
যুদ্ধ গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছে এবং সেখানে জাতিসংঘের দুর্ভিক্ষের সতর্কতা জারি রয়েছে।
জাতিসংঘের একটি তদন্ত গত বুধবার এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, যুদ্ধের সময়ে ইসরায়েল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় তীব্র অপুষ্টির জন্য পাঁচ বছরের কম বয়সি ৮ হাজার শিশুর চিকিৎসা করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা আগামী রবিবার থেকে ঈদুল আযহা উদযাপনের প্রস্ততি নিচ্ছেন। কিন্তু, বাস্তুচ্যুত গাজান উম্মে থায়ের নাসির বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের প্রস্ততির কিছু নেই।’
উত্তর গাজার বেইত লাহিয়াতে তিনি বলেন,‘শিশুরা তাদের বাবাকে জামাকাপড় কিনতে বলছে। কিন্তু, মৌলিক পণ্য থেকে খেলনা পর্যন্ত যেকোনো কিছুর দাম সাধ্যের বাইরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের বাবা এগুলো কোথা থেকে কিনবেন? তিনি আট মাস ধরে বেকার এবং এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের খারার যোগানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
অন্য এক বাস্তুচ্যুত গাজান ফাদি নাসির এএফপিকে বলেছেন, ‘সাধারণ সময়ে বাড়ি এবং রাস্তাগুলো উৎসবের জন্য সজ্জিত করা হয়। তবে আজ আমাদের আর একটি বাড়িও নেই এবং সাজানোর কিছু নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরাদের ঈদের কোনো অনুভূতি নেই।’
হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েলের হামলায় একজন কমান্ডার নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে রকেট এবং ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বেশিরভাগ রকেট বাধা দেওয়া হয়েছে কিংবা গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে।
পরে লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো দেশটির দক্ষিণে একটি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এতে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং সাতজন আহত হয়।
ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন বলেছেন, ‘যুদ্ধের সম্ভাব্য সম্প্রসারণ শুধুমাত্র লেবাননের জন্য নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্যই একটি বিপদ।’