মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শিবসেনা প্রধান

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 18:36:45

মহারাষ্ট্র সরকার গঠন নিয়ে নাটকের চূড়ান্ত পর্দা নামলো অবশেষে। সপ্তাহের মধ্যে গঠিত হলো দ্বিতীয় সরকার। অননুমেয় শিবসেনা-সর্বভারতীয় কংগ্রেস (কংগ্রেস)- ন্যাশনালিস্ট কনফারেন্স পার্টি (এনসিপি) জোটই করলো সরকার গঠন।

শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হলেন শিবসেনাপ্রধান উদ্ধব ঠাকরে। ঐতিহাসিক ও মারাঠি গৌরব আন্দোলনের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন উদ্ধব ঠাকরে। প্রাথমিকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর তিন দলের দুজন করে মোট ছয়জন মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন।

সংসদ সদস্য না হয়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া অষ্টম ব্যক্তি উদ্ধব। শিবসেনা থেকে তিনি তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী হলেন। তার দলীয় দুই পূর্বসূরি ছিলেন মনোহর জোশি ও নারায়ণ রানে। জোটের নেতা-কর্মী-সমর্থকের বাইরে বিভিন্ন দলের আমন্ত্রিত নেতা ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল শিবাজি পার্ক। শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিবাজি পার্কে শিবসেনার দলীয় পতাকার পাশাপাশি উত্তোলন করা হয় কংগ্রেস ও এনসিপির পতাকা।

আমন্ত্রণ পেলেও যোগ দেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেসের শীর্ষ তিন নেতা-সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও রাহুল গান্ধীকে দিল্লিতে গিয়ে উদ্ধবের ছেলে আদিত্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তারাও যোগ দেননি। তবে শুভেচ্ছা বার্তা লিখে পাঠিয়েছেন শিবসেনা প্রধানকে।

উদ্ধব ঠাকরের আমন্ত্রণে শপথ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন চাচাতো ভাই বাল ঠাকরে। হারানো মারাঠি গৌরব উদ্ধারে বিশ্বাসী উগ্রবাদী মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা প্রধান রাজ ঠাকরের সঙ্গে শিবসেনা প্রধানের সম্পর্কটা দা- কুমড়ার মতো। এরপরও শপথ অনুষ্ঠানে আসতে ব্যক্তিগতভাবে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন শিবসেনা প্রধান। শপথ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ধনাঢ্য শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি, তার স্ত্রী নিতা আম্বানি ও ছেলে অনন্ত আম্বানি।

সরকার গঠনের ৮০ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগকারী বিজেপি নেতা দেভেন্দ্র ফাদনাভিসও উপস্থিত হয়েছিলেন। উপস্থিত হয়েছিলেন ফাদনাভিসের সঙ্গে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়া এনসিপির অজিত পাওয়ার। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৮টার আগে দলের প্রধান ও অধিকাংশ নেতাদের না জানিয়ে বিজেপির সঙ্গে সরকার গঠন করেন অজিত। তৎক্ষণাৎ সংবাদমাধ্যমে একে এনসিপির ডিগবাজি বললেও সরকার গঠনের খবর চাউর হলে অবস্থান পরিষ্কার করেন এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার। সম্ভাব্য জোট শরিক শিবসেনা ও কংগ্রেসের সঙ্গে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাতভর তার বৈঠকের পর ভাতিজার এমন আচরণকে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন শারদ। তিনি জোর দিয়ে জানান, নির্বাচনে জয়ী ৫৪ সংসদের মধ্যে ৫০ জন রয়েছে তার পক্ষে। শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোটই সরকার গঠন করবে বলে জানান তিনি।

ফাদনাভিস ও অজিতের সরকার গঠন চ্যালেঞ্জ করে শিবসেনা নেতৃত্বাধীন জোট। সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করে, ফাদনাভিসের সরকারকে ‘ফ্লোর টেস্ট’ করার নির্দেশ দিতে। সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে সংসদ সদস্যদের অবস্থান জানার সাংবিধানিক প্রক্রিয়া হচ্ছে ফ্লোর টেস্ট।

নিজেদের কাছে পর্যাপ্ত সংসদ সদস্যের সমর্থন নেই-এমন আঁচ করতে পেরে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) পদত্যাগ করেন অজিত। এরপর পরই পদত্যাগ করেন ফাদনাভিসও। বিজেপির ক্ষণিক সময়ের সরকারের পতনের পরই নিজেদের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সমর্থন থাকার প্রমাণ নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি জোট।

২৮৮ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্রের রাজ্য সরকার গঠনে ১৪৪ আসন প্রয়োজন যেকোনো দলের। এবারের নির্বাচনে কোনো দলই তা পায়নি। বিজেপি পায় ১০৫টি, শিবসেনা ৫৬টি, কংগ্রেস ৪৪টি ও এনসিপি ৫৪টি আসন পায়। বাকি আসনগুলোতে ১৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বেশ কয়েকটি ছোট দল জয় পায়।

ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় বিজেপির সঙ্গে তিন দশকেরও বেশি পুরোনো মিত্রতা ছেদ করে শিবসেনা। নিজেদের ঘাঁটিতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ‘রাজনৈতিক শত্রু’ হিসেবে পরিচিত কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে হাত মেলায় হিন্দুত্ববাদী দলটি।

আরও পড়ুন: পদত্যাগ করলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ

এ সম্পর্কিত আরও খবর