বগুড়ার গাবতলীতে পুরোনো একটি মসজিদ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এই মসজিদকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অলৌকিক গল্প রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, এই মসজিদে জিনেরা নামাজ আদায় করেন। বাঁশঝাড় ও জঙ্গলে ঢাকা পড়ে থাকা মসজিদটি সম্প্রতি পরিস্কার করায় প্রতিদিনই আশেপাশের গ্রামের লোকজন দেখার জন্য সেখানে ভীড় করছেন। আর প্রত্নতত্ব বিভাগ জানেই না, সেখানে প্রাচীন আমলের একটি মসজিদ রয়েছে।
বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নের সাইরপাড়া প্রমানিক বাড়ির পার্শ্বে এই মসজিদটির অবস্থান। নির্মাণ কাঠামো দেখে স্থানীয়দের ধারণা ৪০০ থেকে ৫০০ বছর আগে মসজিদটি নির্মিত। ১৬ ফুট দৈর্ঘ এবং ১৬ প্রস্থে নির্মিত মসজিদের উচ্চতা ১৮ ফুট। মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে এবং বের হওয়ার জন্য উত্তর দিকে ৫ ফুট উচ্চতার দু’টি দরজা রয়েছে। ২০ ইঞ্চি প্রস্থে পাতলা পোড়া মাটির ইট এবং সুরকির গাঁথুনিতে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদটি। মসজিদ নির্মাণে কোনো রডের বা লোহা জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়নি।
মসজিদের ভেতরে ঈমামসহ ১১ জনের নামাজ পড়ার মতো জায়গা রয়েছে। মসজিদের ভেতরে ছোট্ট একটি মেহরাব দেখা যায়। মসজিদের দেয়ালের চারপাশের কোণায় কারুকার্য চোখে পড়ছে এখনও। বাহিরের দেয়ালে পোড়া মাটির ইটগুলো কিছু কিছু অংশ ক্ষয়ে গেলেও মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করলে এখনও এর সৌন্দর্য জানান দেয়।
মসজিদের ভেতরে ওপরের দিকে গম্বুজের ইট ও দেয়াল এখনও চকচক করছে। যেন মাত্র কিছুদিন আগেই তৈরি করা হয়েছে। পাতলা আবরণের প্লাস্টার দেখা যায় মসজিদের দেয়ালের গোড়ার দিকে। তবে কোন সাল, তারিখ বা কোন শাসকের আমলে এটি নির্মাণ হয়েছে তার কোনো নামফলক নেই। সরকারি খাস খতিয়ানে তিন শতাংশ জমিতে মসজিদ অবস্থিত। অযত্ন আর অবহেলায় মসজিদটির গায়ে ও গম্বুজে শ্যাওলা ও বিভিন্ন আগাছা জন্মেছে।
সরাইপাড়া গ্রামের ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুল গনি প্রাং বলেন, তার দাদার আমল থেকে মসজিদটি এ রকম পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখে আসছেন। কত বছর আগে কারা কীভাবে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন এ বিষয়ে কেউ পরিস্কার কিছু বলতে পারেন না।
তবে একই গ্রামের আব্দুল হান্নান বলেন, এই এলাকায় এক সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস ছিল। মুঘল আমলে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট এলাকা থেকে ১০-১৫ ঘর মুসলমান এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। সে সময় জনসংখ্যা কম থাকায় ছোট আকারের এই মসজিদটি তখন নির্মাণ করা হয় বলে প্রবীনদের ধারণা।
বর্তমানে জিনের ভয়ে কেউ মসজিদে প্রবেশ করেন না। সেখানে জিন আছে এবং জিনেরা নামাজ পড়ে বলে তিনি দাবি করেন।
মসজিদ সংলগ্ন বাড়িতে বসবাস করেন আব্দুল বারী ভুলু। তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে মসজিদ সংলগ্ন টয়লেট নির্মাণ করায় জিন তাকে টয়লেট সরিয়ে নিতে বলে।কিন্তু বিশ্বাস না করায় তার টয়লেটে দিনের বেলা আগুন জ্বলে উঠে।এতেও তিনি টয়লেট না সরানোর কারণে তার বাড়িতেই দিন-দুপুরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, মসজিদে জিন অবস্থান করে।
গ্রামের কাজল প্রাং, আবদুল জলিলসহ অনেকেরই বিশ্বাস, জিন মসজিদের ভেতরে অবস্থান করার কারণে মাঝে-মধ্যে কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে। তারা বলেন, মসজিদের দেয়ালের সঙ্গে শাড়ি কাপড় শুকাতে দেওয়া হলে অলৌকিকভাবে সেই শাড়ি ছিড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এভাবেই মানুষের মধ্যে জিন আতংক থাকায় মসজিদে কেউ প্রবেশ করে না। যে কারণে এতদিন জঙ্গলে ঢাকা পড়ে ছিল মসজিদটি।
সম্প্রতি গ্রামের লোকজন জঙ্গল কেটে পরিস্কার করায় মসজিদটি দৃশ্যমান হয়েছে। আর জিনের মসজিদ হিসেবে প্রচার হওয়ায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী পুরুষ আসেন মসজিদটি দেখার জন্য।
তবে এই মসজিদ সর্ম্পকে কিছুন জানেন না প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর বগুড়ার আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সাইরপাড়া গ্রামে প্রাচীন আমলের মসজিদ আছে তা জানা নেই। তিনি বলেন, লোক পাঠিয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।