দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। দায়িত্বপালনে দু’জনকেই সতর্ক হতে হয়, সর্বদা তৎপর থাকতে হয়। প্রত্যেক সফল পুরুষের অন্তরালে একজন নারীর বড় ভূমিকা থাকে। নারীর পরামর্শ এবং সহযোগিতায় একজন পুরুষ সহজেই বিশ্বজয় করতে পারে। পূণ্যবতী স্ত্রীর এমনই তিনটি বিশেষ গুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
হালাল উপার্জনের পরামর্শ
ইসলাম পুরুষের কাঁধে স্ত্রীর যাবতীয় দায়িত্ব অর্পণ করেছে। বিয়ের প্রথম দিন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত স্বামীকে এ দায়িত্ব যত্নের সঙ্গে পালন করতে হয়। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তমপন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।’ -সুরা বাকারা : ২৩৩
আমরা জানি, উপার্জনের জন্য প্রত্যেক মানুষ পছন্দসই পেশা বেছে নেন। মাথার ঘাম পানি করে পরিশ্রম করেন। এমতাবস্থায় স্বামীর উপার্জন যেন হালাল হয়, সে বিষয়ে স্ত্রীর স্বচ্ছ ধারণা থাকা চাই। প্রয়োজনে পরামর্শ দেবে, হালাল উপার্জন কম হলেও তাতে সন্তুষ্ট থাকবে। কেননা অবৈধ পথের আয়ে কোনো সুখ নেই।
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এমন শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নাম তার উপযুক্ত স্থান। -শোয়াবুল ঈমান : ৮৯৭২
স্বামীর কাজ সমর্থন করা
একজন পূণ্যবতী স্ত্রীকে সুখে-দুঃখে স্বামীর পাশে থাকতে হয়। দুঃখ ও কষ্টের সময় সান্ত্বনা দিতে হয়। স্বামীর যেকোনো বৈধ কাজে সাপোর্ট করতে হয়। গবেষণার কাজে সহযোগিতা করতে হয়।
হজরত খাদিজা (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জানমাল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। হেরা গুহায় তার ধ্যান-সাধনাকে সমর্থন করেছেন। প্রথম অহি অবতীর্ণ হওয়ার পর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরে এসে হজরত খাদিজা (রা.) কে চাদর দ্বারা শরীর ঢেকে দিতে বলেন। তিনি তাই করলেন। অতঃপর কৌশলে তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে অহি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ণ বিবরণ শুনে তাকে সান্ত্বনা দেন।
তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহতায়ালা আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না, আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায়-দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারি করেন এবং দূর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। এভাবেই তিনি নানা কথায় রাসুলুল্লাহ (সা.) কে আশ্বস্ত করেছেন। -সহিহ বোখারি : ৩
দ্বিনপালনে সহযোগিতা
দ্বিনের বিধানপালনের ক্ষেত্রে একজন পূণ্যবতী স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে হয়। স্ত্রীর প্রচেষ্টায় অবাধ্য স্বামীও হেদায়েতের পথে আসতে পারে। দ্বিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
দাম্পত্য ও সামাজিক জীবনে পরস্পর সহযোগিতা প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না। আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন।’ -সুরা মায়েদা : ২
দ্বিনের প্রতি সহযোগী স্বামী-স্ত্রীর জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রহমতের দোয়া করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে রাতের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে, অতঃপর তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। যদি তার স্ত্রী জাগ্রত হতে না চায়, তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়।
ওই মহিলার ওপরও আল্লাহতায়ালা রহমত বর্ষণ করুন, যে রাতের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। অতঃপর তার স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়, সেও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে। সে যদি জাগ্রত হতে না চায় তবে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। -সুনানে নাসায়ি : ১৬১০