দরিদ্র, বঞ্চিত ও অসহায়দের সহায়, পাপী উম্মতের সুপারিশকারক, নবীদের সর্দার, সাম্য আর ন্যায়বিচারের প্রতীক, বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহর রহমত এবং সর্বশেষ রাসূল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অজস্র যোগ্যতা, গুণ, অবদান আর মহত্ত্বের যাথাযোগ্য বর্ণনা করার সাধ্য নেই বিশ্বের কোনো মানুষের। একমাত্র আল্লাহতায়ালাই তার প্রিয়তম হাবিবের যথাযথ পরিচিতি তুলে ধরতে সক্ষম।
নবী মুহাম্মদ (সা.) মানবতার মুক্তির দিশারী এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ও পূর্ণ মানব। তিনি ছিলেন মানব জীবনের সব ক্ষেত্রের ও সব পর্যায়ের সর্বোত্তম এবং পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। তাই তিনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।
নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ও মহান আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল। তার পর আর কোনো নবীর আবির্ভাব হবে না এ কারণেই যে মানব জাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও সৌভাগ্যের জন্য যা যা দরকার তার সব নির্দেশনাই তিনি দিয়ে গেছেন।
জাহেলিয়াতের কালোমেঘ সারাবিশ্বের ওপর যখন ছায়া মেলে রেখেছিল এবং অসৎ ও ঘৃণ্য কার্যকলাপ, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ, লুটতরাজ ও সন্তান হত্যাসহ সব ধরনের নৈতিক গুণ যখন বিলুপ্ত হচ্ছিল- তখনই মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্যরবির উদয় হয়।
মহানবীর জন্মগ্রহণের মুহূর্তের ঘটনাগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো- ওই সব মানুষের অন্তরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেওয়া ও মনোযোগ সৃষ্টি করা- যারা মূর্তিপূজা, অন্যায় ও জুলুমের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল।
আসলে বিশ্বনবীর আবির্ভাবের অনেক আগ থেকেই বিশ্ব জুলুম, শোষণ, অনাচার, কুসংস্কার, অশান্তি, সংঘাত এবং নানা ধরনের পাপাচারে নিমজ্জিত ছিল। এ অবস্থায় বিশ্বনবীর আবির্ভাব ছিল ঘন অমাবশ্যার রাতে সূর্যের প্রদীপ্ত উন্মেষের মতই অফুরন্ত কল্যাণ আর আলোর বন্যার ছড়াছড়ি এবং তার বাণী স্বাধীকারহারা মানুষের মনে জাগিয়ে তুলল অধিকার ফিরে পাওয়ার দূর্বার বাসনা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি সঞ্চালন করেন- সততা, সৌন্দর্য, ন্যায়বিচার, সুধর্ম এবং সব ধরনের সৎগুণ ও নীতির জোয়ার। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ বিশ্ব সভ্যতার চরম উন্নতির পরিবেশ তৈরি হয়। আজ বহু অমুসলিম মনীষীও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হলেন- হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই মহামানবের আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে বিশ্ববাসীর সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তি।
তিনি সর্বোত্তম আদর্শ, সবক্ষেত্রেই অন্যদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী ও সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়া কিংবা দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন এবং যে কোনো মহতি গুণে তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি জীবনে কখনও কোনো পাপ বা অন্যায় আচরণ করেননি। জগদ্বাসীকে সৎ ও পবিত্র করা ছিল বিশ্বনবীর দায়িত্ব। এ জন্যই সুরা বাকারায় মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রাসূল, যিনি তোমাদের কাছে আমার বাণীগুলো পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তার তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।’
নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজেই বলেছেন, মানব চরিত্রকে পূর্ণতা দেওয়াই ছিল তার রেসালাতের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, পরোপকার, সাহসিকতা ও বীরত্ব, বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সৌজন্যতা, ক্ষমাশীলতা, উদারতা ও অন্যের কল্যাণকামিতাসহ সর্বোত্তম চরিত্রের সবগুলো দিকেই তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।
যদি কেউ মহানবীকে অসম্মান করত তিনি তার প্রতিশোধ নিতেন না। অন্যদের ভুল ও দুর্ব্যবহারকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। তাদের অত্যাচার ও নিপীড়নের বিপরীতে ক্ষমা মহানুভবতা এবং বদান্যতা প্রকাশ করতেন। কোরাইশদের শত অত্যাচার ও নিপীড়ন সহ্য করে ও তিনি মক্কা বিজয়ের পর তাদেরকে ক্ষমা করেছিলেন এবং মুক্তি দিয়েছিলেন। দয়াশীল ও ক্ষমাশীল হওয়া সত্ত্বেও যদি কখনও কেউ ইসলামের সীমারেখাকে অতিক্রম করত, তবে কোনোরূপ নমনীয়তা দেখাতেন না।
নবী মুহাম্মদ (সা.) ২৩ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মানবজাতির কাছে উপহার দিয়ে গেছেন পবিত্র ইসলাম ধর্ম। এ ধর্ম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম। চিরন্তন ধর্ম হিসেবে কোনো বিশেষ জাতি কিংবা গোত্রের নয়। ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব হলো- এ ধর্মের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচীর অন্যতম। নবী মুহাম্মদ (সা.) ঈমানের ছায়াতলে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের সংস্কৃতি উপহার দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের আয়াতের আলোকে নবী মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম সমাজকে আল্লাহর রশি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে ও পরস্পর বিবাদ-বিচ্ছিন্নতা পরিহার করতে বলেছেন। মুসলমানরা যতদিন তার বাণী মান্য করেছিল ততদিন তারা শত্রুদের ওপর বিজয়ী হয়েছিল এবং এর ফলে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে।