অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ দু’টি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে এক বন্দুকধারীর হামলায় চারজন নিহতের প্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শুক্রবার (৬ নভেম্বর) দেশটির সংহতি মন্ত্রী সুসান রাব জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যে দু’টি মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে তার একটিতে হামলাকারীর যাতায়াত ছিল। পরবর্তীতে আরও মসজিদ বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে।
কুজতিম ফেজুলাই নামের ওই হামলাকারী অস্ট্রিয়া ও উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার দ্বৈত নাগরিক ছিল। সে কথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোমবার হামলার কিছুক্ষণ পর পুলিশের গুলিতে সে নিহত হয়।
শুক্রবার সুসান রাব জানিয়েছেন, হামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তন্মধ্যে আটজনকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। আগামীতে সম্ভাব্য যেকোনো হামলা ঠেকাতে অস্ট্রিয়ার রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অস্ট্রিয়ান পুলিশ সম্ভাব্য যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে অভিযান চালাচ্ছে। এর আগে ফ্রান্সে এক হামলার দায়ে বেশ কিছু মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
যদিও ভিয়েনার ওই সন্ত্রাসী হামলার সময় দুই ফিলিস্তিনি ও তুরস্কের এক মুসলিম তরুণ সাধারণ নাগরিক ও আহত এক পুলিশের সাহায্য করে বীরত্বের পরিচয় দেন। এমনকি ভিয়েনার মেয়র তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে অসম সাহসিকতার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান। তার পরও মসজিদ বন্ধ করার ঘটনাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন স্থানীয় মুসলমানরা।
রোমান ক্যাথলিকদের পরেই দেশটিতে ইসলাম হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। অস্ট্রিয়া ১৯১২ সালে ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে বসবাসকারী মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিশ্বের তেল রফতানিকারী দেশের সংস্থা ওপেকের সদর দফতর পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়। এ শহরেই জাতিসংঘের তৃতীয় সদর দফতর অবস্থিত। ভিয়েনার কোলঘেঁষে বয়ে গেছে বিখ্যাত দানিউব নদী। নদীর পাড়েই বিখ্যাত ভিয়েনা ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদের অবস্থান। একটি মিনার ও সবুজ রঙের এক গম্বুজের মসজিদটি দেখতে বেশ সুন্দর। মসজিদটি ভিয়েনার মুসলমানদের প্রতীক বলে মনে করা হয়।
অস্ট্রিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যার হার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ ভাগ। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ভিয়েনায় এ হার ৯.৮২ শতাংশ। সে হিসেবে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৯ লাখের কাছাকাছি।
ভিয়েনায় ১২৫টির মতো মসজিদ রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বাইরে গ্রাস, সালসবব্রুর্গ, লিনস ও ক্লাগেনফুট শহরেও বেশ কয়েকটি মসজিদ আছে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি মুসলমানদের পরিচালিত পাঁচটি মসজিদ রয়েছে। যেগুলোতে নিয়মিত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়।
অস্ট্রিয়ার মসজিদে বিদেশি কেউ ইমামতি করতে পারেন না। সব ইমামকে জার্মান ভাষায় কথা বলার যোগ্যতা থাকতে হয় এবং ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি প্রোগ্রাম থেকে উত্তীর্ণ হয়ে অথবা সমমানের অন্যকোনো প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হয়ে তাদের ‘পেশাগত যোগ্যতা’ প্রমাণ করতে হয়।