১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে উগ্র হিন্দু করসেবকরা। ২৮ বছর পর সেই ৬ ডিসেম্বর ধন্নিপুরের নতুন মসজিদ নির্মাণের নকশা চূড়ান্ত করার কথা জানাল সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। তবে নকশা এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অযোধ্যার ধন্নিপুরে মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করেছে উত্তর প্রদেশ সরকার। তবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের তরফে আগেই জানানো হয়, ওই জমিতে শুধুমাত্র মজজিদ নির্মাণ করা হবে না। সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল, ইন্দো ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ও গ্রন্থাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওই পাঁচ একর জায়গায় নকশা তৈরি করেছে ‘ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট।’ নতুন মসজিদে একসঙ্গে দুই হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে জানা গেছে। মসজিদটি দেখতে বাবরি মসজিদের মতো হবে না। সম্পূর্ণ নতুন নকশায় ১৫ হাজার বর্গফুট জমির ওপর নির্মিত হবে।
সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড জানিয়েছে, ধন্নিপুর এলাকার মানুষের বহুদিন ধরেই একটি হাসপাতাল নির্মাণের দাবি ছিল। কিন্তু উত্তর প্রদেশ সরকার তাদের দাবি কানে তোলেনি। তাই সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণ করবে। আর সেটা হবে মসজিদ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পাঁচ একর জমির মধ্যেই।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৮তম বর্ষপূর্তিতে অযোধ্যায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। উত্তেজনা ছড়াতে পারে এই আশঙ্কায় এলাকায় ব্যাপক পুলিশ টহল দেওয়া হচ্ছে।
চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর ধন্নিপুরে মসজিদ, হাসপাতাল, লাইব্রেরী ও রিসার্চ সেন্টার নির্মাণের নকশা তৈরির দায়িত্ব পায় ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। তিন মাসে তারা মসজিদ কমপ্লেক্সের নকশা প্রস্তুত করেছে। তবে কবে নাগাদ মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হবে, তা এখনও জানা যায়নি।
গত ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ে অযোধ্যার কোনো উল্লেখযোগ্য স্থানে বিকল্প মসজিদ তৈরির জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে বলেছিল।
তবে উত্তর প্রদেশ সরকার যে জায়গাটি বেছে নিয়েছে তা অযোধ্যা শহর থেকে অনেক দূরে। জায়গাটি একটি সরকারি কৃষি ফার্ম, সেখানে এখনও কৃষিকাজ চলছে; রয়েছে একটি দরগাও। বরাদ্দকৃত স্থানটি অনেক মুসলিম নেতারই পছন্দ নয়। জমিটি অযোধ্যা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুর গ্রামে লখনৌ হাইওয়ের ওপর এবং রৌনাহি থানার ঠিক পেছনে অবস্থিত। তবে এই এলাকায় মুসলিম জনসংখ্যা বেশি। এখানে প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলিম বসবাস করেন।
এই প্রকল্পের স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার স্থাপত্য বিভাগের ডিন অধ্যাপক এস এম আখতার।
তিনি বলেছেন, ‘নতুন মসজিদটি একেবারেই পুরোনো বাবরি মসজিদের মতো দেখতে হবে না, আধুনিক ভবন তৈরি হবে সেখানে।’ তার মতে, ‘স্থাপত্য বিদ্যায় কোনো কিছুই হুবহু নকল হয় না, সবসময়ই নতুন কিছু সৃষ্টি হয়। যা কিছু পুরোনো, তা পুরাতত্বের বিষয় আর আমরা যখন কিছু বানাই, সেটা হয় নতুন সৃষ্টি।’