১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে উগ্র হিন্দু করসেবকরা। মসজিদ ভাঙার ২৮ বছর পর ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে অযোধ্যার ধন্নিপুরে নতুন মসজিদ নির্মাণ শুরুর কথা জানাল সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।
আগামী ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বাবরি মসজিদের বদলে অযোধ্যার পাঁচ একর জমিতে মসজিদ কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। অযোধ্যার বহুল আলোচতি মসজিদের ডিজাইন ও নির্মাণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) তা প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
ছয় মাস আগে ভারতের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড অযোধ্যার পরিকল্পনাধীন মসজিদ নির্মাণ করতে ইন্দো-ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে। ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার স্থাপত্য বিভাগের ডিন অধ্যাপক এস এম আখতারকে নিয়োগ দেয়। তার তত্ত্বাবধানে চলছে যাবতীয় কাজ।
সম্প্রতি ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের (আইআইসিএফ) মহাসচিব আতহার হুসাইন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি ট্রাস্ট সদস্যের সম্মতিতে অযোদ্ধা মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। সাত দশক আগে ওই দিন আমাদের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল। আমাদের সংবিধান বহুত্ববাদের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত, যা আমাদের মসজিদ প্রকল্পের মূল ভিত্তি।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাঁচ একর জমি মসজিদ নির্মাণ ট্রাস্টকে দেওয়া হয়। সেই জমিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সিদ্ধান্তকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন দেশটির বুদ্ধিজীবীরা। ‘সংবিধান কার্যকর করার গৌরবোজ্জ্বল দিনকে এভাবে উপস্থাপন করার মধ্য দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় তাদের উদারতাকে প্রকাশ করেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অযোধ্যার বাসিন্দা সাংবাদিক তিলক মাথুরে।
কী রয়েছে মসজিদ কমপ্লেক্সে? জানা গেছে, মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল, কমিউনিটি কিচেন, লাইব্রেরি ও কোরআন শিক্ষার জন্য একটি মাদরাসা থাকবে। হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে, কমিউনিটি কিচেন থেকে দিনে দু’বার আশপাশের এলাকার দরিদ্রদের জন্য খাবার দেওয়া হবে।
মূল মসজিদটি হবে গোলাকৃতির। সেখানে একসঙ্গে দুই হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। সৌরবিদ্যুতে চালিত হবে গোটা কমপ্লেক্স।
স্থাপত্যবিদ অধ্যাপক এস এম আখতার জানিয়েছেন, ‘নয়া এ মসজিদটি বাবরি মসজিদ থেকে আকারে বেশ বড় হবে। কিন্তু সেই কাঠামোর মতো দেখতে হবে না।’
২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ে অযোধ্যার কোনো উল্লেখযোগ্য স্থানে বিকল্প মসজিদ তৈরির জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে বলেছিল। কোর্টের নির্দেশ মেনে অযোধ্যার ধন্নিপুরে মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ করেছে উত্তর প্রদেশ সরকার।
তবে উত্তর প্রদেশ সরকার যে জায়গাটি বেছে নিয়েছে তা অযোধ্যা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুর গ্রামে লখনৌ হাইওয়ের ওপর, রৌনাহি থানার ঠিক পেছনে অবস্থিত। জায়গাটি একটি সরকারি কৃষি ফার্ম, সেখানে এখনও কৃষিকাজ চলছে; রয়েছে একটি দরগাও। বরাদ্দকৃত স্থানটি অনেক মুসলিম নেতারই পছন্দ নয়। তবে এই এলাকায় মুসলিম জনসংখ্যা বেশি। এখানে প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলিম বসবাস করেন।