ইসলাম ধর্মে নতুন কোনো কিছু শুরুর আগে আনুষ্ঠানিকতা বলতে মহান আল্লাহর নাম স্মরণ এবং দোয়া ছাড়া আর কোনো রীতি মানার বাধ্যবাধকতা নেই। বিষয়টি মাথায় রেখে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে অযোধ্যায় প্রস্তাবিত মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন (আইআইসিএফ)।
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস অর্থাৎ আগামী ২৬ জানুয়ারি শুরু হবে মসজিদ নির্মাণের কাজ। মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরুর আগে মসজিদ চত্বরে বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি প্রস্তাবিত মসজিদের নির্মাণ স্থলে উত্তোলন করা হবে জাতীয় পতাকা।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) বৈঠকের পর এমনটাই জানিয়েছে ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন (আইআইসিএফ)। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়।
রাম মন্দিরের নির্মাণস্থল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুরে অযোধ্যার মসজিদটি তৈরি হবে। মসজিদ নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধানে থাকা আইআইসিএফ ২৬ জানুয়ারি মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। ওই দিন সকাল ৯টায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নির্মাণ প্রকল্প শুরু হবে।
সংগঠনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এলাকায় সবুজায়ন ঘটানোই আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য আমাজন বৃষ্টি অরণ্য, দাবানলে ভস্ম হয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকা এবং বিশ্বের নানা দেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা এনে লাগানো হবে। যাতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যায়।’
হাসপাতাল, জাদুঘর, গ্রন্থাগার, বাগান, কমিউনিটি কিচেন, ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল রিসার্চ সেন্টার এবং প্রকাশনী সংস্থাসহ মসজিদ চত্বরের একটি নকশা ইতোমধ্যেই অনুমোদন দিয়েছে অযোধ্যা জেলা প্রশাসন।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে উগ্র হিন্দু করসেবকরা। এটা নিয়ে মামলার প্রেক্ষিতে ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায়ে অযোধ্যার কোনো উল্লেখযোগ্য স্থানে বিকল্প মসজিদ তৈরির জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে বলে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাঁচ একর জমি মসজিদ নির্মাণ ট্রাস্টকে দেওয়া হয়।
পরে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট ১৯ ডিসেম্বর ধন্নিপুরে নতুন জায়গায় নতুন মসজিদ তৈরির নকশা প্রকাশ করে।
অযোধ্যা মসজিদের জন্য জায়গা গ্রহণ নিয়ে ভারতের মুসলিম সংগঠনগুলোর মতানৈক্য রয়েছে। ভারতের প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই মসজিদ যদি হয় তা হবে অবৈধ নির্মাণ।
ল বোর্ডের প্রতিনিধি জাফরইয়াব জিলানি বলেছেন, ওয়াকফ আইন এবং শরিয়তের বিধান অনুযায়ী মসজিদের জমি বিনিময় করা যায় না। মসজিদও একটির জায়গায় অন্য একটি তৈরি করা যায় না। কাজেই অযোধ্যায় যে নতুন মসজিদ নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে, তা অবৈধ ও বেআইনি। জিলানি বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির সদস্য। ওই কমিটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খুবই অসন্তুষ্ট।
তবে মসজিদ নির্মাণে প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের সম্পাদক আতাহার হোসেন বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট রামজন্মভূমি মামলার রায়ে ওই জমি দিতে বলেছে। সে অনুযায়ী সেখানে যে মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে, তাকে কোনোভাবেই বেআইনি বলা যায় না। আর শরিয়তের বিধান এক এক জন এক এক রকমভাবে ব্যাখ্যা করেন। সুতরাং যারা এটাকে অবৈধ বলছেন তাদের ব্যাখ্যার সঙ্গে আমাদের ব্যাখ্যা মেলে না।
অন্যদিকে অযোধ্যা মামলার অন্যতম মামলাকারী জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (জেইউএইচ) সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানিও বিকল্প জমি গ্রহণ না করার পক্ষে তাদের মত দিয়েছেন। তার মতে, মসজিদের পরিবর্তে বিকল্প কিছু নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। না টাকা, না জমি। কোনো মুসলিম সংগঠনেরই এই অদল-বদল স্বীকার করা উচিত নয়।
এমনকি হায়দরাবাদের এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও এই জমি নেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়েছেন।