বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের জন্য ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সাতমাসের বেশি সময় উমরা পালন বন্ধ ছিল। পরে সীমিত পরিসরে নানা শর্তপালন সাপেক্ষে উমরা পালনের অনুমতি দেয় সৌদি আরব। এরও প্রায় ৫ মাস পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন পবিত্র উমরা পালন করলেন। উমরা পালনে যেয়ে তিনি পবিত্র কাবাঘরে প্রবেশের সুযোগ পান এবং হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন।
শনিবার (৬ মার্চ) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী উমরা পালন করেন। দীর্ঘ এক বছর পর এই প্রথম কোনো সরকার প্রধান উমরা পালন ও পবিত্র কাবাঘরে প্রবেশের সুযোগ পেলেন। এর আগে কাবার ছাদ সংস্কার ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কাবার দরোজা খোলা হলেও কোনো অতিথি পবিত্র কাবায় প্রবেশের সুযোগ পাননি।
মুহিউদ্দিন ইয়াসিন রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে উমরা পালন করেন। উমরা পালনে যেয়ে প্রথমে কাবার ভেতরে প্রবেশ করেন ও নফল নামাজ আদায় করেন। পরে কাবাঘর থেকে বের হয়ে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করে তাওয়াফ ও উমরার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।
মুহিউদ্দিন ইয়াসিন মালয়েশিয়ার অষ্টম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৮ সালে দেশটির রাজনীতিতে পদার্পণ মুহিউদ্দিনের। সেবারই পাগোহ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ৪২ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ছয়টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন মুহিউদ্দিন। পররাষ্ট্র এবং বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পদেও ছিলেন ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।
মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পাকাতান হারাপান ক্ষমতায় থাকার সময় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি। দেশটির ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সময়ে ছয় বছর উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ২০১৫ সালে মুহিউদ্দিনকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেন নাজিব। নাজিব রাজাকের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কথা বলায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।
পরে ২০১৬ সালে গঠন করেন রাজনৈতিক দল পার্টি প্রিবুমি বারসাতু মালয়েশিয়া (পিপিবিএম)। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল নবগঠিত এ দলটি।
মালয়েশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য জোহরের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ৯ বছর দায়িত্বে ছিলেন মুহিউদ্দিন। তার বাবা একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব মালয় থেকে ১৯৭০ সালে অর্থনীতি ও মালয় স্টাডিজে স্নাতক সম্পন্ন করেন মুহিউদ্দিন।
মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। যেকোনো সময় দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। এর আগে মুহিউদ্দিনের সৌদি আরব সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সেটাকে আরও গুরুত্ববহ করে তুললো তার কাবার ভেতরে প্রবেশ।
সাধারণত যারা কাবাঘরের ভেতরে প্রবেশ করেন, তারা সেখানে নফল নামাজ আদায় করেন। কাবাঘরের ভেতরে যেকোনো দিকে ফিরে নামাজ আদায়া করা যায়।
কাবাঘরের ভেতরে কোনো ইলেকট্রিক লাইট-ফ্যান নেই। কাবার মেঝে এবং ওয়াল মার্বেল পাথর দ্বারা নির্মিত। এ ঘরের কোনো জানালা নাই। কাবাঘরের ১টি মাত্র দরজা। কাবাঘরে প্রবেশের জন্য আলাদা সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। কাবার দরজা খোলার সময় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।