স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক: জাদু-টোনা থেকে রক্ষায় করণীয়
স্বামী-স্ত্রী একে অপরের আজীবন সঙ্গী। তাই তাদের জীবন চলার পথে মান-অভিমান, ভুল-ভ্রান্তি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়ই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে যখন তা দাম্পত্য কলহে রূপ নেয়।
এ কলহের সময় কোনো পক্ষ সম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন্য নানা অনৈতিক কাজও করে। অনেক সময় জাদু-টোনার আশ্রয় নেয় কেউ কেউ। আবার তৃতীয় কোনো পক্ষ শত্রুতার কারণে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট করতে কাজ করে।
স্বামী-স্ত্রী যাদের ওপর জাদু করা হয়, অনেকক্ষেত্রে তারা বুঝতে পারে না। এটাকে স্বাভাবিক মনে করে তারা সারাক্ষণ ঝগড়া করতে থাকে! আমাদের দেশে ছেলের মা, মেয়ের মা থেকে শুরু করে আত্মীয়রা নানা কারণে দম্পতির ওপর কালো জাদু করে। কয়েকটি লক্ষণ থাকলে বুঝা যায় তাদের ওপর কালো জাদু করা হয়েছে। এর কয়েকটি হলো-
১. অতিরিক্ত ঝগড়া করা। স্বামী-স্ত্রী যদি হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ ছাড়া সারাক্ষণ শুধু ঝগড়া করে, এটা অন্যতম লক্ষণ।
২. যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করে স্বামী/স্ত্রীর প্রতি ঘৃণা তৈরি হয়। একজন আরেকজনের ভালো কথা শুনলেই রাগ ওঠে। রান্না করলে পছন্দ হয় না। তার কোনো কিছুই পছন্দ হয় না। তাকে দেখতে কুৎসিত লাগে।
৩. সহবাসে অনীহা দেখা যায়, আগে এ রকম হতো না। কিন্তু হঠাৎ দেখা যায়, কোনো একজন আগ্রহ পাচ্ছে না।
৪. হঠাৎ করে দেখা যাচ্ছে, একজন আরেকজনের প্রতি অতিরিক্ত মুগ্ধ হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক ভালোবাসা অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে গেছে। অফিসে, কাজে যেতে ভালো লাগে না। সারাক্ষণ স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করে। এই ধরনের জাদু করে স্ত্রী পক্ষের কেউ বা স্ত্রী!
স্বামী-স্ত্রী জাদু-টোনা ও বদনজর থেকে রক্ষা পেতে কী করতে পারেন?
১. নিয়মিত আমল করার কোনো বিকল্প নেই। জামাতে নামাজ আদায়, পরিপূর্ণ পর্দা, নামাজের পর আয়াতুল কুরসি, সূরা নাস, সূরা ফালাক পড়া ও ঘুমানোর পূর্বে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া।
২. স্ত্রীর কপালে ডান হাত রেখে এই দোয়া পড়া- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা, ওয়ামিন শাররি মা জাবালতাহা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২১৬০
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে তার মধ্যকার কল্যাণ ও তাকে আপনি যে কল্যাণ সহকারে সৃষ্টি করেছেন তা কামনা করছি। আর আমি তার মধ্যকার অকল্যাণ ও তাকে আপনি যে অকল্যাণ সহকারে সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৩. বাসররাতে স্ত্রীকে নিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। না পড়ে থাকলে এখনো পড়তে পারেন। নামাজ শেষে এই দোয়াটি দেখে দেখেই পড়ুন- ‘আল্লাহুম্মা বারিক লি ফি আহলি, ওয়া বারিক লিআহলি ফি; আল্লাহুম্মারজুকহুম মিন্নি, ওয়ারজুকনি মিনহুম; আল্লাহুম্মাজমায়া বাইনানা মা জামায়াতা ফি খাইরিন; ওয়া ফাররিক বাইনানা ইজা ফারাকাতা ফি খাইরিন।’ -আল মুজামুল কাবির : ৮৯৯৩
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার পরিবারে আমার স্বার্থে বরকত দিন এবং আমার মাঝে পরিবারের স্বার্থে বরকত দিন। হে আল্লাহ! তাদের আমার পক্ষ থেকে রিজিক দান করুন এবং আমাকে তাদের পক্ষ থেকে রিজিক দান করুন। হে আল্লাহ! যে কল্যাণ আপনি জমা করেছেন, তা আপনি আমাদের মাঝে জমা করুন। আর যদি আপনি কল্যাণকে পৃথক করেন, তাহলে আমাদের মাঝে পৃথক করুন।’
৪. সহবাসের পূর্বের একটি দোয়া আছে। বেশিরভাগ স্বামী-স্ত্রী এই আমলে অবহেলা করেন। মুখস্থ না থাকলে দেখে দেখেই দোয়াটি পড়তে পারেন- ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানু ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাজাকতানা।’ -সহিহ বোখারি : ৭৩৯৬
৫. স্বামী-স্ত্রীর বদনজর লাগতে পারে। তাদের সুখ দেখে অনেকেই হিংসায় পুড়ে। এটা থেকে হেফাজত থাকতে দুইজনই দোয়া পড়বেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার নাতি হজরত হাসান ও হজরত হুসাইন (রা.)-এর জন্য এই দোয়াটি পড়তেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) তার দুই ছেলের জন্যও দোয়াটি পড়তেন।
দোয়াটি হলো- ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন হাম্মাতিন, ওয়ামিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’ -সহিহ বোখারি : ৩৩৭১
অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ কালেমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী ও প্রত্যেক কুদৃষ্টি (বদনজর) থেকে পানাহ চাচ্ছি।