বাসায় অতিথি এলে কমবেশি আমরা সবাই খুশি হই। মন আনন্দে ভরে উঠে। বাঙালি বরাবরই অতিথিপরায়ণ জাতি। পবিত্র ইসলামেও আতিথেয়তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের উপমহাদেশের ইসলাম প্রচারকরা মেহমানদের আদরযত্ন করতেন।
অতিথি শব্দটার সঙ্গে সবাই পরিচিত হয়েছি বড় হওয়ার পর। ছোটবেলায় ‘অতিথি’ বুঝতাম না। তখন বলাবলি করতাম বাসায় মেহমান এসেছে। ছোটবেলায় বাসায় নানা, মামা, চাচা, খালারা এলে হইচই লাগিয়ে দিতাম। এ ঘটনা সবার জীবনেই ঘটেছে।
আসলে আতিথেয়তা আমাদের রক্তে মিশে আছে। অতিথিকে সমাদর করতে আমরা পছন্দ করি। আমরা অতিথি আপ্যায়ন করতে পারি যখন কেউ বাসায় আসে। বর্তমানে ফেসবুক, স্মার্টফোনের যুগে নাগরিক সভ্যতার ব্যস্ততার কারণে বেশিরভাগ সময় কেউ কারও বাসায় যেতে চান না। রাস্তাঘাটেই বলেন, ‘আজ না, আরেকদিন আসবো।’ সেই সময় আমরা চেষ্টা করি আশপাশের কোনো কনফেকশনারি বা কফিশপ থেকে কিছু খাওয়াতে। তাও যদি অতিথির সময়ে না কুলায় শেষ চেষ্টা হিসেবে বলি, অন্তত এক কাপ চা খান। এ ঐতিহ্য নিয়েই আমাদের বাঙালি সমাজ চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।
পশ্চিমা বিশ্বে অতিথি আপ্যায়ন নেই বললেই চলে। তারা ‘হাই, হ্যালো’ বলেই কাজ সারতে চায়। অনেকে চায়ের কথা বললেও বেশিরভাগ নাগরিক ‘নো থ্যাংকস’ বলে বিদায় নেয়। এটা তাদের সংস্কৃতির অংশ।
আমরা মুসলিমরা সুন্নাহ পদ্ধতিতে নিজেরা খাই, অন্যকেও খাওয়াই। আর পবিত্র ইসলামে মেহমানদারিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমে অতি ছোট্ট একটা ঘটনা তুলে ধরছি পাঠকদের জন্য।
একবার বনু গিফার গোত্রের এক লোক হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেহমান হলেন। নবী করিম (সা.) আগের দিন অভুক্ত ছিলেন। যেদিন মেহমান এলেন, সেদিন ঘরে ছাগলের দুধ ছাড়া আর কিছু ছিলো না। নিজে অনাহারি হয়েও হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সেই মেহমানকে ছাগলের দুধটুকু খাওয়ালেন। কিন্তু অতিথিকেও বুঝতে দিলেন না যে, তিনি ক্ষুধার্ত।
এ ঘটনাটি আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। আমাদের এটা শিক্ষা দেয় যে, মানুষ সব আল্লাহর সৃষ্টি। সবাই সমান। কাউকে অবহেলা করতে নেই। ধনী বা গরিব যেই হোক, সাধ্যমতো তাকে আপ্যায়ন করতে হবে।
আর পবিত্র কোরআনেও অতিথি আপ্যায়ন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা নিজের ওপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। যদিও বা নিজেরা ক্ষুধার্ত থাকে। আর যারা স্বভাবজাত লোভ-লালসা এবং কামনা থেকে রক্ষা পেয়েছে, তারাই সফলকাম।’ -সূরা হাশর: ৯
আসা যাক মুসলিম মনীষীগণ, ইসলাম প্রচারকগণ কিভাবে অতিথি আপ্যায়ন করতেন সে প্রসঙ্গে। তার আগে জানা প্রয়োজন কেন এ দেশে ইসলাম প্রচারক ও সুফিরা আগমন করেছিলেন।
তারা ইসলাম প্রচার করেছেন, সেই সঙ্গে আতিথেয়তার প্রমাণও দিয়েছেন। অনেক ইসলাম প্রচারক বুজুর্গের খানকার পাশে মুসাফিরখানা আছে। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন মানুষ তাদের কাছে হেদায়েতের জন্য যান। কেউ ইসলামের আমল-আখলাক ঠিকমতো কিভাবে পালন করতে হয় তা জানতে এসব মনীষীদের কাছে যান। তাদের অনেকেরই থাকার জায়গা নেই। তারা সেসব সুফিদের মুসাফিরখানায় রাতযাপন করেন। যতদিন ইচ্ছা থাকেন। তাদেরকে কেউ বাড়ি যাওয়ার জন্য তাগাদা দেন না। এর মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য ফুটে উঠে। ইসলামে আতিথেয়তা লৌকিকতামুক্ত, সরলতায় পরিপূর্ণ।
বর্তমানে আলেম-ওলামাদের মধ্যেও অতিথিপরায়ণতা আছে। আছে বাঙালী সমাজের মুসলমানদের মাঝে। ইসলামের বিধানমতে, অতিথি আপ্যায়নের শিক্ষা কিছুটা ধরে রাখতে পারলে ইন্টারনেট, ফেসবুকের যুগে এ সমাজে মানুষে মানুষে আন্তরিকতা, মিল-মহব্বত অনেক বাড়বে। সমাজে বইবে শান্তির সুবাতাস।