সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের সেই হাওলাদার বাড়ি সংলগ্ন বায়তুন নাজাত জামে মসজিদটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) সকালে মসজিদটি খোলপেটুয়া নদীর ভাটার টানে ভেঙে পড়ে। এর আগে গত ১০ আগস্ট থেকে উপকূলীয় রিং বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। এরপর থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল মসজিদটি। একই অবস্থা জেলা অসংখ্য মসজিদ। শুধু প্রতাপনগরে ১৮টি মসজিদ এখনও পানির মধ্যে। যেকোনো সময় এগুলো বিলীন হয়ে যেতে পারে। এখনই বাঁধ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে এগুলো যেকোনো সময় ভেঙে বিলীন হয়ে যাবে বন্যার পানিতে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় বন্যতলা বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। এরপর থেকেই মানুষ পানিতে ভাসছে। বাঁধটির সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো সহযোগিতা করেনি। বন্যার কারণে প্রতাপনগর ইউনিয়ন ধ্বংস হওয়ার পথে। এখানকার মানুষের অধিকাংশ কাজই এখন নৌকাতে সারতে হয়। দীর্ঘদিন পানি থাকার কারণে ঘর-বাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে হাওলাদার বাড়ি সংলগ্ন প্লাবিত এলাকায় পানি সাঁতরে মসজিদটিতে আজান ও নামাজ আদায় করতেন মসজিদের ঈমাম ও খতিব হাফেজ মঈনুর রহমান। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর মানুষের হৃদয় আকৃষ্ট হয়। এলাকার মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য নৌকার ওপর বিশেষভাবে নির্মিত একটি ভাসমান মসজিদ সম্প্রতি উপহার দেন চট্টগ্রামের শামসুল হক ফাউন্ডেশন।
গত ৫ অক্টোবর জোহরের নামাজ আদায় করে ভাসমান ওই মসজিদ উদ্বোধন করা হয়। দাবি করা হচ্ছে, এটা দেশের প্রথম ভাসমান মসজিদ। মসজিদের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন মসজিদে নুহ (আ.)।’ পানিতে নিমজ্জিত হাওলাদার বাড়ি জামে মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে ভাসমান মসজিদটি। পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি ভাসমান মসজিদে ৭০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৬ ফুট প্রস্থের এ মসজিদে একসঙ্গে চারজন অজু করতে পারবেন। মসজিদটিতে রয়েছে পানির ট্যাংক, ট্যাব ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। কয়েক সেট পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা হয়েছে। ভাসমান মসজিদটি স্থির রাখতে নৌকার দুই ধারে বাঁধা রয়েছে ২৫০ লিটারের ৮টি ড্রাম।
মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম এ মোতাকাব্বের ভাসমান মসজিদের নকশা আঁকেন। এরপর মাত্র ১২ দিনে মসজিদ তৈরি হয়।