হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় স্থান হলো- মসজিদ।’ যেখানে কেবল তার ইবাদত-বন্দেগি পালন করা হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং নিশ্চয়ই মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে ডেকো না।’ -সুরা জিন : ১৮
যেহেতু মসজিদ মুসলমানদের ইবাদতের স্থান। ইবাদতের লক্ষ্যে মসজিদে প্রবেশের বিশেষ কিছু আদব ও শিষ্টাচার রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
অজু করে মসজিদে গমন
উত্তম স্বভাব হলো- সুন্দরভাবে অজু করে মসজিদে যাওয়া। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি বাড়ী থেকে পাক-পবিত্র হয়ে অর্থাৎ অজু করে কোনো ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য হেঁটে আল্লাহর ঘরে অর্থাৎ মসজিদে যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি পাপ ঝরে পড়ে এবং একটি করে মর্যাদা বাড়ে।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৬৬
মসজিদ গমনের পথে দোয়া
মসজিদে গমনের পথে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া পড়তেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, অতঃপর হজরত রাসুলে কারিম (সা.) নামাজের জন্য বের হলেন এবং তিনি এ দোয়াগুলো পড়লেন, ‘হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে আলো (নূর) সৃষ্টি করে দাও, আমার দৃষ্টিশক্তিতে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার পেছন দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার সামনের দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার ওপর দিক থেকে আলো সৃষ্টি করে দাও এবং আমার নীচের দিক থেকেও আলো সৃষ্টি করে দাও। হে আল্লাহ! আমাকে নূর বা আলো দান করো।’ -সহিহ মুসলিম : ৭৬৩
মসজিদে যাওয়ার সময় ধীর-স্থিরভাবে চলা
নামাজের জন্য মসজিদে গমনকালে তাড়াহুড়া না করে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া উত্তম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা ইকামত শুনতে পাবে, তখন নামাজের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত স্থিরতা ও গাম্ভীর্য অবলম্বন করা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সঙ্গে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পূর্ণ করবে।’ -সহিহ বোখারি : ৬৩৬
দুর্গন্ধযুক্ত কিছু খেয়ে মসজিদে না যাওয়া
কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন কিংবা এ জাতীয় দুর্গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে যাওয়া নিষেধ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন বা এ জাতীয় সবজি খাবে, সে যেন আমার মসজিদের কাছেও না আসে। কেননা মানুষ যেসব জিনিস দ্বারা কষ্ট পায় ফেরেশতারাও সেসব জিনিস দ্বারা কষ্ট পায়।’ -সহিহ বোখারি : ৮৫৪
মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া
মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া সুন্নত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন এই দোয়া পড়ে- আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক, (অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার ওপর তোমার রহমতের দরজাগুলো খুলে দাও) আর যখন বের হয় তখন বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা, (অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি)।’ -সহিহ মুসলিম : ৭১৩
পোষাক ও সাজসজ্জা
মসজিদে সাধ্যমতো সুন্দর ও ভালো পোষাক পরিধান করে যাওয়া। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! প্রত্যেক নামাজের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ করো। আর খাও, পান করো, কিন্তু অপচয় করো না, নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আরাফ : ৩১
মসজিদে যেয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া
মসজিদে প্রবেশ করে বসার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা সুন্নত, যাকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ বলা হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের আগে বসবে না।’ -সহিহ বোখারি : ১১৬৩
আজানের পর মসজিদ থেকে বের না হওয়া
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আজানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়া ঠিক নয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন মোয়াজ্জিন আজান দেয়, তখন কেউ যেন নামাজ আদায় না করে মসজিদ থেকে বের না হয়।’ -মিশকাত : ১০৭৪
নামাজির সামনে দিয়ে অতিক্রম না করা
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো নামাজির সামনে দিয়ে গমনকারী ব্যক্তির জানা থাকত যে, তার ওপর কি পাপের বোঝা চেপেছে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকাকেও সে প্রাধান্য দিত। আবু নাসর বলেন, আমি জানি না তিনি চল্লিশ দিন, মাস নাকি বছর বলেছেন।’ -সহিহ বোখারি : ৫১০
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন সুতরা (নামাজ আদায়কারীর সামনে স্থাপিত প্রতিবন্ধক বিশেষ) স্থাপন করে নামাজ পড়ে, তখন সে যেন তার নিকটবর্তী হয়ে দাঁড়ায়- যাতে শয়তান তার নামাজের মধ্যে কোনোরূপ কুমন্ত্রণা দিতে না পারে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৯৫
মসজিদে শোরগোল না করা
মসজিদ ইবাদত-বন্দেগির স্থান। সেখানে উচ্চকণ্ঠে কথা বলা ঠিক নয়, যাতে অন্যের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে ইতিকাফকালে সাহাবিদের উচ্চস্বরে কেরাত পড়তে শোনে পর্দা সরিয়ে বললেন, জেনে রেখো, তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় রবের সঙ্গে গোপনে মোনাজাতে মশগুল। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিয়ো না এবং পরস্পরের সামনে কেরাতে অথবা নামাজে আওয়াজ উঁচু করো না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৩৩২