আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ অনুসারে জীবন অতিবাহিত করার মাঝেই সর্বপ্রকার কল্যাণ নিহিত। বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে আমাদের অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের আচার-আচরণ হওয়া চাই অন্যদের থেকে ভিন্ন। অন্যরা নতুন বছর যেভাবেই উদযাপন করুক না কেন একজন মুসলমান হিসেবে আমাকে এর ব্যতিক্রম হতে হবে। আমি বছর শুরু করব তাহাজ্জুদ নামাজ, নফল রোজা, দোয়া এবং ভালো কাজের মাধ্যমে।
সাধারণত দেখা যায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পাশ্চাত্যের অনুকরণে আমরাও আনন্দ-উল্লাস করি। বিভিন্ন মন্দকর্মে জড়িয়ে পরি। আর এসব করার ক্ষেত্রে আমাদের হৃদয়ে এ উপলব্ধি সৃষ্টি হয় না যে, আমরা যা করছি তা কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। নিজেকে একজন মুসলমান ঠিকই দাবি করছি কিন্তু আমার কাজকর্ম ইসলাম সম্মত হয় না।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যদি তুমি খারাপ কাজ করো, আর তোমার খারাপ লাগে, ভালো কাজ করে ভালো লাগে তাহলে তুমি মুমিন। কিন্তু যদি খারাপ কাজ করে ভালো এবং ভালো কাজ করে খারাপ লাগে তাহলে তুমি মুমিন হতে পারো না।’ -সহিহ মুসলিম
আজ আমাদের অবস্থা এমনই হয়েছে যে, যত প্রকার মন্দকাজ আছে সবই আমি করছি ঠিকই কিন্তু নিজেকে আবার ভালো মানুষও মনে করছি।
ইসলামের জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে তার খুতবায় এক ঐতিহাসিক উক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, যা ইমাম তিরমিজি (রহ.) স্বীয় গ্রন্থ তিরমিজি শরিফ এবং ইমাম ইবনে আবি শায়বা (রহ.) স্বীয় গ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বায় উল্লেখ করেন। হজরত ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, ‘হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।’ -জামে তিরমিজি
অথচ আমরা এটি ভেবে দেখি না যে, জীবন থেকে একটি বছরের সমাপ্তি ঘটছে আর প্রবেশ করছি নতুন বছরে, যেখানে আমার করণীয় হলো সৃষ্টিকর্তার দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, নতুন বছর যেন সর্বদিক থেকে মঙ্গলময় হয় সেই দোয়া করা। তা না করে আমরা সব ধরণের বৃথা কার্যকলাপ এবং অপকর্ম করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছি। নববর্ষের মতো সময়ের একটি এহেন গুরুত্বপূর্ণ পর্বে এমন কোনো কাজ করা সমীচীন হবে না যা আমাদের আমলনামা বা জীবনপঞ্জিকে কলঙ্কিত করবে।
হজরত আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু কত চমৎকারই না বলেছিলেন, ‘তুমি রাতের আঁধারে এমন কোনো কাজ করো না, যার কারণে তোমাকে দিনের আলোয় মুখ লুকাতে হবে।’
আসলে আজ পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির ধর্মের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, তাই তাদের দৃষ্টি সেখানে পৌঁছা সম্ভব নয় যেখানে একজন মুমিনের দৃষ্টি পৌঁছে। একজন মুমিনের মহিমা হলো সে এই সমস্ত বৃথা কার্যকলাপ এড়িয়ে চলে।
এক কথায় বর্ষবরণের নামে কোনো ধরনের অশ্লীলতাকে কোনো বোধসম্পন্ন ও সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারেন না। একজন প্রকৃত মুসলমানকে সামান্যতম পরোয়া করা উচিত না যে কে কি ভাববে। কেননা আমার জবাব আমাকেই আল্লাহপাকের কাছে দিতে হবে। তাই অন্যের অনুকরণ করে এমন কিছু যেন না করি যার ফলে আল্লাহ নারাজ হবেন।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে অন্য জাতির সঙ্গে আচার-আচরণে, কৃষ্টি-কালচারে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত বিবেচিত হবে।’ -সুনানে আবু দাউদ
আমাদেরকে জাগতিকতার আনন্দ-উল্লাসে ডুবে না গিয়ে মহান আল্লাহর স্মরণে বছরের সূচনা করতে হবে এবং সারা বছরই যেন আমার দ্বারা কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত না হয় সেই সংকল্পও করতে হবে।
তাই আসুন, নতুন বছরকে বরণ করি সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণের মাধ্যমে, নিশিরাতের তাহাজ্জুদের সেজদায় ক্রন্দনরত দোয়ার মাধ্যমে। আল্লাহতায়ালা নতুন বছর দেশ, জাতি এবং গোটা বিশ্বের সবার জন্য অফুরন্ত কল্যাণ বয়ে আনুক।