পবিত্র কোরআন-হাদিসে বৃষ্টির নানা উপকারিতার কথা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিত উৎপন্ন করেছি।’ -সুরা কাফ : ৭
স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ। তবে অতীতে অনেক জাতি বৃষ্টির আজাবে ভুগেছিল। হজরত নুহ (আ.)-এর জাতিকে অতিবৃষ্টির মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি রবকে ডেকে বললেন, আমি তো অসহায় হয়ে পড়েছি, আমাকে সাহায্য করুন। অতঃপর আমি আকাশের দরজা প্রবল বর্ষণের জন্য উন্মুক্ত করে দিই। ভূপৃষ্ঠ থেকে ঝরণা প্রবাহিত করি। অতএব, সব পানি পরিকল্পনা অনুসারে মিলিত হয়।’ -সুরা কামার : ১০-১৩
মেঘের গর্জনে আজাবের শঙ্কা : বৃষ্টির আগমুহূর্তে মেঘের গর্জন শুনলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যেত। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি কখনো রাসুল (সা.)-কে এমনভাবে হাসতে দেখিনি যে তার আলা জিহ্বা দেখা যায়। তিনি সব সময় মুচকি হাসতেন। তিনি মেঘ বা বাতাস দেখলে তার চেহারায় শঙ্কা দেখা যেত। আমি বলতাম, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষ মেঘ দেখে খুশি হয়। কারণ তাদের আশা একটু পরই বৃষ্টি হবে। আর আপনি মেঘ দেখলে আপনার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ করা যায়? তখন তিনি বলেন, ‘হে আয়েশা! আমি কিভাবে নিশ্চিত হবো যে, তাতে আজাব নেই? কারণ অনেক সম্প্রদায় প্রবল বাতাসে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। অনেক সম্প্রদায় মেঘ দেখে বলেছে, এই মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে।’ -সহিহ বোখারি : ৪৮২৮
আজাব থেকে মুক্তির দোয়া : অনেক সময় বৃষ্টির মাধ্যমে আজাব ঘনিয়ে আসে। অতিবৃষ্টির কারণে তৈরি হয় ভয়াবহ বন্যা বা ভীতিকর পরিবেশ। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা উপত্যকার প্রান্তে মেঘ দেখল তখন বলতে লাগল, এই মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে, (তখন বলা হলো) বরং এটা তা-ই, যা তোমরা তাড়াহুড়া করতে, এই ঝড়ো বাতাসে মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’ -সুরা আহকাফ : ২৪
মেঘের গর্জন শুনে দোয়া : মেঘের শব্দ শুনলে দোয়া পড়া সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মেঘ ও বজ্রের আওয়াজ শুনলে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের আপনার ক্রোধ দিয়ে হত্যা করবেন না। আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করবেন না এবং এর আগেই আমাদের নিরাপদে রাখুন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪০৫
অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির থেকে মুক্তির দোয়া : অতিবৃষ্টিতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন এবং ফসল বিনষ্ট হয়। তাই অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি উভয়টি ক্ষতিকর। হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেছেন, জুমার দিন এক ব্যক্তি মিম্বার বরাবর দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন। সেই লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং রাস্তাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই হাত তুলে দোয়া করে বলেন, ‘আল্লাহুম্মাস কিনা আল্লাহুম্মাস কিনা আল্লাহুম্মাস কিনা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দিন (তিনবার বলেন)। আল্লাহর শপথ, ওই সময় আকাশে মেঘ বা অন্য কিছুই ছিল না। সালআ পাহাড় ও আমাদের মধ্যভাগে কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। অতঃপর পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মেঘ বেরিয়ে এসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়।
এরপর ছয় দিন পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাইনি। পরের জুমার দিন ওই দরজা দিয়ে আবার এক লোক প্রবেশ করে। রাসুল (সা.) খুতবা দিতে দাঁড়ালে সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! সম্পদ নষ্ট হচ্ছে এবং পথঘাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি তা বন্ধ করেন।
রাসুল (সা.) দুই হাত তুলে দোয়া করলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা, ওয়া লা আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল জিবালি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের ওপর নয়, আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন। টিলা, পাহাড়, উঁচু ভূমি, মালভূমি, উপত্যকা ও বনাঞ্চলে বর্ষণ করুন। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, এরপর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায় এবং আমরা রোদের মধ্যে হাঁটতে শুরু করি। -সহিহ বোখারি : ১০১৩