জেনে নিন হালাল হারামের মূলনীতি

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মাহমুদ হাসান ফাহিম, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-10-12 21:55:13

ইসলামি শরিয়তে হালাল-হারাম একটি গুরুপূর্ণ বিষয়। সব আসমানি গ্রন্থে হালাল-হারাম প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে বর্ণনা হয়েছে। বিষয়টি শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত মূলনীতির (কোরআন ও সুন্নাহর) বর্ণনা নির্ভর। ইসলামে সেসব বিষয়কে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, শরিয়তের পরিভাষায় তা হালাল, আর যেসব বিষয়কে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তা হারাম। -কাওয়ায়েদুল ফিকহ : ২৬৭

হালাল হারাম, এই দুই বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে- মানবজাতির কল্যাণ সাধন এবং অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা। এসব বিধান পালনে রয়েছে মানুষের আত্মিক ও দৈহিক কল্যাণ এবং বিবেক-বুদ্ধির সুস্থতা। আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর থেকে সব ধরনের কঠোরতা তুলে নিয়েছেন। ‘সবকিছু বৈধ, কোনো কিছুই নিষিদ্ধ নয়’ এমন নীতিহীনতা থেকেও তিনি বাঁচিয়েছেন। আর বাস্তবেই ইসলামের হালাল-হারাম বিধান মানুষকে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছে।

মূলনীতিসমূহ
এক. হালাল-হারাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানুষের এখতিয়ার নেই। শরিয়ত যা হালাল বলবে তাই হালাল, আর যা হারাম করবে তা চিরদিনের জন্য হারাম। সুতরাং কেউ যদি হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল সাব্যস্ত করতে চায়, তাহলে সে আর মুসলিম থাকে না। আল্লাহতায়ালা হালাল-হারামকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য যা হারাম করেছেন তা বিশদভাবে তোমাদের নিকট বর্ণনা করে দিয়েছেন।’ -সুরা আনআম : ১৯

হাদিসে হজরত রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট।’ -মিশকাত : ২৪১

দুই. সকল প্রকার ক্ষতিকর বস্তুই হারাম। মানুষকে শরিয়তের বিধান দেওয়া হয়েছে তাদের কল্যাণের জন্য। তাই যেসব জিনিস অপবিত্র, নিকৃষ্ট এবং অকল্যাণকর ও ক্ষতিকর সেগুলো শরিয়ত চিরতরে হারাম ঘোষণা করেছে। যেমন- মদ, মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকর।

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং সেই পশু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যকারো নামে জবাই করা হয়েছে। শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, পতনে মৃত জন্তু, অন্যকোনো পশুর শিংয়ের আঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খেয়েছে এমন জন্তু হারাম। তবে (মরার আগে তোমরা) যা জবাই করেছ তা ছাড়া এবং সেই জন্তুও (হারাম), যাকে (প্রতিমার জন্য) বলি দেওয়া হয় এবং জুয়ার তীর দ্বারা (গোশত ইত্যাদি) বণ্টন করাও (তোমাদের জন্য হারাম)। এসব কঠিন ও মারাত্মক গোনাহের কাজ।’ -সুরা মায়িদা : ৩

তিন. যেসব উপকরণ হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার কারণ হয়, শরিয়ত সেগুলোকেও হারাম ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে মূলনীতি হচ্ছে, যা কিছু হারামের দিকে ধাবিত করে তা হারাম। যেমন ব্যভিচার হারাম। যেসব কাজ ব্যাভিচারের পথ উন্মুক্ত করে শরিয়ত সেগুলোকেও হারাম করেছে। বেগানা নারী পুরুষের নির্জনে একত্রিত হওয়া, অবাধ দেখা সাক্ষাত, প্রেম-প্রীতি, নগ্ন ছবি, যৌন উত্তেজনামূলক গান-বাজনা ইত্যাদি। -ইসলামে হালাল হারামের বিধান : ৫০

চার. হারাম কাজ করার জন্য কৌশল অবলম্বন করাও হারাম। অপকৌশল অবলম্বন করে হারাম কাজ সম্পাদন করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘ইহুদিরা যা করত তোমরা তা করতে যেয়ো না। আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা সেগুলো কৌশলের সাহায্যে হালাল করার চেষ্টা করত।’ -গিয়াসাতুল লাহফান : ১/৫১৩

কোনো হারাম জিনিসের নাম বা তার বাহ্যিক আকৃতি পরিবর্তন করলে এবং তাতে তার মূল অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে যে জিনিস কখনও হানাল হয় না। যেমন ‘মদকে পানীয় এবং সুদকে মুনাফা নামে অভিহিত করলেই তা হালাল হয়ে যাবে না।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের একদল লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তাকে হালাল মনে করবে।’ -মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৫/৬০

নবী কারিম (সা.) আরও বলেন, ‘মানুষের মাঝে এমন এক যুগ আসবে, যখন তারা সুদকে ক্রয়-বিক্রয়ের নাম দিয়ে তা হালাল মনে করবে।’ -ইসলামে হালাল হারামের বিধান : ৫২

পাঁচ. যে বস্তুতে অন্যের অধিকার আছে তা হারাম। যেমন- চোরাই মাল, লুটতরাজের মাল, ছিনতাইকৃত মাল ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশ্যে মামলা দয়ের করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনেশুনে (অন্যায়ভাবে) পাপের পথে গ্রাস করবে।’ -সুরা বাকারা : ১৮৮

এ সম্পর্কিত আরও খবর