মক্কার মসজিদে হারাম ইসলামের অন্যতম সম্মানিত স্থান। এখানে রয়েছে পৃথিবীর প্রথম ও সবচেয়ে পুরনো ঘর পবিত্র কাবা। এই ঘর ঘিরেই পুরো বিশ্বের মুসলিমরা প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ পড়েন। হজ ও ওমরাহ পালন করতে এখানে সমবেত হন লাখ লাখ মুসলমান। তাই এই মসজিদে নামাজ আদায়ের যেমন ধর্মীয় মর্যাদা আছে, তেমনি এখনকার ইমামদের আছে বিশেষ মর্যাদা। তদ্রুপ মদিনার মসজিদে নববিরও রয়েছে আলাদা মর্যাদা। যে কারণে মক্কা-মদিনার ইমাম-খতিবদের বিষয়ে আলাদা দৃষ্টি থাকে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনসাইড দ্য হারামাইন জানিয়েছে, মসজিদুল হারামের নিয়মিত ইমামের সংখ্যা কমছে। চলতি বছর দুই জন ইমাম তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে অব্যাহতি নেন শায়খ ড. ইয়াসির আল-দাওসারি। এর আগে ফ্রেব্রুয়ারি মাসে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন শায়খ ড. সৌদ আল শুরাইম।
শায়খ ড. ইয়াসির আল-দাওসারি গত পাঁচ বছর পবিত্র মসজিদুল হারামে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি মসজিদুল হারামে তারাবির নামাজের অতিথি ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৯ সালে রাজকীয় নির্দেশনায় তাকে স্থায়ী ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি ইমামদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী ছিলেন। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ রাজকীয় আদেশে ইয়াসির আদ দাওসারিকে মসজিদুল হারামের নিয়মিত ইমাম থেকে খতিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এক বছর না যেতেই তার পদত্যাগের খবর সামনে এলো।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মসজিদুল হারামের দীর্ঘ ৩২ বছর ইমাম ও খতিব শায়খ ড. সৌদ আল শুরাইমের পদত্যাগের খবর সামনে আসে। তিনি জনপ্রিয় ও বিখ্যাত খতিবদের একজন।
১৯৯২ সালে একটি রাজকীয় নির্দেশনায় ড. শুরাইম মক্কার সর্বোচ্চ কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তিন বছর সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পরে সৌদির সাবেক বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের বিশেষ নির্দেশনায় ড. শুরাইম মসজিদুল হারামে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান।
চলতি বছর মসজিদে নববির দুই ইমাম ও খতিব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তারা হলেন- শায়খ আহমদ হুজাইফি ও শায়খ খালিদ মুহান্না। গত সেপ্টেম্বর থেকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জেনারেল প্রেসিডেন্সির সঙ্গে চার বছর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর।
২০১৯ সালে সৌদি আরবের মন্ত্রিপরিষদে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির ইমামদের নিয়োগ ও বরখাস্ত বিষয়ক একটি নীতিমালা অনুমোদন লাভ করে। নীতিমালা অনুসারে সব ইমামকে দ্য প্রেসিডেন্সি অব রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে চার বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করতে হবে এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন করতে হবে।
ইনসাইড দ্যা হারামাইন সাইটে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মসজিদে নববি ও হারামের ইমাম-খতিব ও মুয়াজ্জিন নিয়োগ নীতিমালা অনুসারে শায়খ ইয়াসির আল-দাওসারিসহ এই দুইজন চুক্তি নবায়ন করেননি। ফলে তারা ইমামতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। অবশ্য চুক্তি নবায়ন করলে তারা আবার দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। বিশেষ করে আগামী রমজান মাসে কিংবা অন্যকোনো সময়ের মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে অতিথি ইমাম হিসাবে তারা পুনরায় নিযুক্ত হতে পারেন।
মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির ধর্ম বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সি ইমামদের অব্যাহতির বিষয়ে কিছু বলেনি, আবার অস্বীকারও করেনি। এর আগেও অব্যাহতি নেওয়া ইমামদের ব্যাপারেও জেনারেল প্রেসিডেন্সি কোনো মন্তব্য করেনি।
জনপ্রিয় এই চার ইমামের অব্যাহতির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। সেই সঙ্গে অনেকেই আশা করছেন, তারা ইমামের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও আসন্ন রমজানে তারাবি নামাজের ইমাম হিসেবে সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।