রাজধানীর পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলা মাঠে লাখো ইমামের সম্মেলন ঘটাতে যাচ্ছে সরকার। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে সেখানে ষষ্ঠ দফায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, জাতীয় ইমাম সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় এক লাখ ইমামকে আনা হচ্ছে। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি থাকবেন মসজিদে নববির ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল বুয়াইজান। তিনি ইতিমধ্যে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। সম্মেলনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের পুরস্কৃত করা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত প্রায় ৮০ হাজার আলেম। সরকার তাদের প্রতি মাসে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী ভাতা দেয়। এই শিক্ষকেরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এর বাইরেও কয়েক হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম আছেন। সেই ইমামদের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ধর্মমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মডেল মসজিদ দেশের প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় স্থাপন করতে নয় হাজার ৪৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ২০১৭ সালে গ্রহণ করে সরকার। ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক (২য় সংশোধিত) প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গণপূর্ত অধিদপ্তর মসজিদগুলো নির্মাণ করছে।
এরই মধ্যে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়ে, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ে, ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ তৃতীয় পর্যায়ে, ১৭ এপ্রিল চতুর্থ পর্যায়ে এবং ৩০ জুলাই পঞ্চম পর্যায়ে ৫০টি করে ২৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে মোট ৩০০টি মডেল মসজিদ চালু হবে।
প্রতিটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ৪৩ শতাংশ জমির ওপর তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা, উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহর ও ৩টি সিটি করপোরেশনে ৫টিসহ মোট ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৯টি (নবগঠিত ৪টি উপজেলাসহ) এবং সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় চারতলা বিশিষ্ট (নিচতলা ফাঁকা থাকবে) ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে।
চারতলাবিশিষ্ট প্রতিটি মসজিদে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। তিনতলাবিশিষ্ট মসজিদগুলোতে একত্রে ৯০০ জন মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
এসব মসজিদে নারী-পুরুষদের জন্য পৃথক অজু ও নামাজ কক্ষ, ইমাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র, হেফজখানা, গণশিক্ষা কেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্র, পাঠাগার, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, জানাজার ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন, লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, ই-কর্নার, বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের থাকার ব্যবস্থাসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
যেসব উপজেলায় উদ্বোধন হবে মডেল মসজিদ
মডেল মসজিদ উদ্বোধন হবে- ফরিদপুরের চরভদ্রাসন, গোপালগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, মাদারীপুরের শিবচর, নরসিংদীর শিবপুর, মুন্সিগঞ্জ সদর, শরীয়তপুরের জাজিরা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, জয়পুরহাট সদর, বগুড়ার দুপচাচিয়া ও গাবতলী, পাবনার সাথিয়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রাজশাহীর বাঘা, কুড়িগ্রাম সদর ও রৌমারি, দিনাজপুর সদর, ঠাকুরগাঁও সদর, নীলফামারী সদর, ডোমার, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর, বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও মেহেন্দিগঞ্জ, বরগুনার তালতলী, ভোলার মনপুরা ও পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলায়।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর, চাঁদপুর সদর, নোয়াখালী সদর, কুমিল্লা সদর, দেবীদ্বার, লালমাই ও সদর দক্ষিণ, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, ফেনী সদর, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই, বাগেরহাটের কচুয়া, রামপাল ও শরণখোলা, ঝিনাইদহ সদর, কুষ্টিয়া জেলা সদর, খুলনার ডুমুরিয়া, নড়াইল সদর ও কালিয়া, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও কলারোয়া, হবিগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হবে।
১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ জারি করে এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বায়তুল মোকাররম সোসাইটি’ এবং ‘ইসলামিক একাডেমি’ নামক তৎকালীন দুটি সংস্থার বিলোপ সাধন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারি অর্থে পরিচালিত অন্যতম একটি বড় সংস্থা হিসেবে দেশ-বিদেশে নন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত পবিত্র কোরআনের বাংলা তরজমা, তাফসির, হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ, রাসুল (সা.)-এর জীবন ও কর্মের ওপর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামি আইন ও দর্শন, ইসলামি অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহাবি ও মনীষীদের জীবনী ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
এ প্রতিষ্ঠান ঢাকার প্রধান কার্যালয়সহ সারাদেশের ৬৪টি জেলা কার্যালয়, আর্ত-মানবতার সেবায় ২৮টি ইসলামিক মিশন, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। বৃহত্তর কলেবরে ২৮ খণ্ডে ইসলামি বিশ্বকোষ, ১২ খণ্ডে সিরাত বিশ্বকোষ প্রকাশ করে ধর্মতাত্ত্বিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার সঙ্গে সংগতি রেখে সারাদেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ইসলামি সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠবে।
এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত মডেল মসজিদের লোগো সংবলিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্তকরণ করেন।
বর্তমান সরকার সারাদেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ধর্মীয় দিক থেকে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। যেখানে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এটি সম্পন্ন করছেন। তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।