জুমার দিন যেসব আমল করতে হয়

আমল, ইসলাম

শরিফ আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-11-23 19:47:10

জুমার দিন সপ্তাহের সেরা দিন। দিনটি আল্লাহতায়ালা এই উম্মতকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন, যা অন্যকোনো জাতিকে দেওয়া হয়নি। এই দিনের নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা রয়েছে। সেখানে জুমার দিনের প্রধান আমলের কথা বলা হয়েছে। অসংখ্য হাদিসে জুমার বিভিন্ন আমল ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে‌। এগুলো জানা এবং আমলে পরিণত করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে জুমার দিনের আমলগুলো উল্লেখ করা হলো-

জুমার রাতের আমল
জুমার রাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- ওই রাতে আল্লাহর কাছে বান্দাদের আমলনামা পেশ করা হয়, তাই ওই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া। অন্তত তাহাজ্জুদ যেন ছুটে না যায়, সেদিকে সতর্ক থাকা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অর্থাৎ জুমার রাতে আদম সন্তানের আমল (আল্লাহর সামনে) পেশ করা হয়। তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের আমল কবুল করা হয় না। -মুসনাদে আহমদ : ১০২৭২

জুমার আগের আমল
জুমার আগের আমল হলো- স্বীয় শরীর পরিপাটি করা। শরীর পরিপাটি করার জন্য প্রয়োজনে হাত-পায়ের নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা, বিশেষ অঙ্গের লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি। তারপর গোসলের সুন্নত আদায় করা। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, জুমার দিন যেন প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি গোসল করে, মেসওয়াক করে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী সুগন্ধি ব্যবহার করে। -সহিহ বোখারি : ৮৮৮

আরেক হাদিসে এ দিনের বিস্তারিত করণীয় এবং ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু সাঈদ (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর যৌথ বর্ণনায় এসেছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, তার কাছে থাকা সুন্দরতম জামাটি পরিধান করল এবং সংগ্রহে থাকলে সুগন্ধি ব্যবহার করল, এরপর জুমায় উপস্থিত হলো, কারো কাঁধ ডিঙিয়ে গেল না, তারপর আল্লাহর তওফিক অনুযায়ী সুন্নত-নফল নামাজ আদায় করল, অতঃপর খতিব (খুতবার জন্য) বের হওয়া থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত নিশ্চুপ থাকল। তার এই নামাজ এ জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত গোনাহের কাফফারা হবে। -সুনানে আবু দাউদ : ৩৪৩
অন্য হাদিসে আরও অতিরিক্ত তিন দিনের গোনাহ মাফের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জুমার দিনের প্রধান দুই আমল
জুমার দিনের প্রধান দুটি আমল নামাজ আদায় করা এবং খুতবা শোনা। খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ -সুরা জুমা : ৯

জুমার ফরজের পূর্বে এবং পরে চার রাকাত করে সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়। এটা কাবলাল জুমা ও বাদাল জুমা নামে প্রসিদ্ধ। হজরত আবু আবদুর রহমান সুলামি (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত নামাজ পড়ার নির্দেশ দিতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৫৫২৫

বাদাল জুমার পরে আরো দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। হজরত আবু আবদুর রহমান সুলামি (রহ.) বলেন, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) যখন আমাদের মাঝে (হুকুমতের পক্ষ থেকে) এলেন তখন তিনি জুমার পরে চার রাকাত পড়তেন। এরপর হজরত আলী (রা.) তার খেলাফতকালে এসে জুমার পরে দুই রাকাত ও চার রাকাত (মোট ৬ রাকাত) পড়তে লাগলেন। এটা আমাদের কাছে ভালো লাগল। ফলে আমরা এটা গ্রহণ করলাম। -তহাবি শরীফ : ১৯৮০
কিছু মানুষ শুধু জুমার দুই রাকাত ফরজ পড়ে চলে যায়। আবার কিছু মানুষ সুন্নত না পড়ে মোনাজাত করে চলে যায়। এই দুই শ্রেণির মানুষ নিঃসন্দেহে ভুলের মধ্যে রয়েছে।

বিশেষ মুহূর্তে দোয়ার আমল
দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জুমার দিনে দোয়া কবুলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) জুমার দিন সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, তাতে এমন একটি মুহূর্ত আছে; তখন কোনো বান্দা নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে অবশ্যই তিনি তাকে দান করেন। তিনি নিজ হাত দিয়ে ইশারা করলেন, সেই সময়টি অল্প। -সহিহ বোখারি : ৯৩৫

জুমার দিন বেশি বেশি দোয়া করা, এদিনের বিশেষ আমল

 

দোয়া কবুলের সেই বিশেষ মুহূর্ত কোনটি- তা নিয়ে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। এক. ইমামের মিম্বর বসা থেকে নামাজ শেষ হওয়ার মাঝামাঝি সময়ে দোয়া করা। দুই. দুই খুতবার মাঝে যখন ইমাম সাহেব যখন বসে তখন অন্তরে দোয়া করা। তিন. আসরের পর এবং সূর্য হেলে যাওয়ার পর দোয়া করা। -সহিহ মুসলিম : ৮৫৩

সুরা কাহাফ তেলাওয়াত
জুমার দিনের একটি অন্যতম আমল হলো- জুমার আগে অথবা পরে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে আরাবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তাকে একটি আলোকিত নূর দেওয়া হবে। -মুসতাদরাকে হাকেম : ৩৩৯২
কোনো কোনো আলেম হাতে সময় কম থাকলে অন্তত সুরার প্রথম দশ আয়াত এবং শেষ দশ আয়াত পাঠ করার কথা বলেছেন।

দরুদ পাঠ
নবী কারিম (সা.)-এর শানে দরুদ পাঠ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। সাধারণত প্রত্যেক নবীপ্রেমিক বান্দা দৈনন্দিন আমলের মধ্যে দরুদ রাখেন। তবে জুমার দিনে দরুদ বেশি বেশি পাঠ করতে হয়। হজরত আউস ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এদিনে হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এদিন তার ওফাত হয়; এদিন শিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে। এদিন সব সৃষ্টিজীব বেহুশ হয়ে যাবে। কাজেই এদিনে তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়ে থাকে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে? যখন আপনার দেহ মাটিতে মিশে যাবে! রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালা আম্বিয়ায়ে কেরামের দেহগুলোকে মাটির জন্য (বিনষ্ট করা) হারাম করে দিয়েছেন। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

আসরের পর আমল
দৈনিক আসরের নামাজের পর থেকে নিয়ে সূর্য ডোবার পূর্ব পর্যন্ত সময়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তাসবিহ পাঠ করা মুস্তাহাব। মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমার প্রতিপালকের তাসবিহ ও তাহমিদে মশগুল থাকো সূর্য উদয়ের পূর্বে এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে। -সুরা ত্বহা : ১৩০
সপ্তাহের সব দিনে সম্ভব না হলে কমপক্ষে জুমার দিনে আসরের পর সময়টায় জিকির-আজকার, দোয়া ও ইস্তেগফারে কাটানো। এ বিষয়ে সবার সতর্ক হওয়া উচিত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর