ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে মিসর, জর্ডান, কুয়েত ও মরক্কোর সাধারণ জনগণ। ফলে এসব দেশে ব্যবসা করা কেএফসি ও ম্যাকডোনাল্ডসের মতো বেশ কয়েকটি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বড় পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো এখন আপাতত মিসর ও জর্ডানে বয়কটের বড় প্রভাব টের পাচ্ছে। ধীরে ধীরে বয়কটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কুয়েত এবং মরক্কোতেও। তবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্কে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মিসরে ম্যাকডোনাল্ডসের করপোরেট অফিসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে তাদের বিক্রির পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমেছে। এখন নিজেদের খরচ মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রয়টার্সের একজন প্রতিনিধি মিসরের রাজধানী কায়রোর ম্যাকডোনাল্ডসে গিয়ে দেখতে পান, একজন কর্মী ক্রেতাশূন্য রেস্টুরেন্টটি পরিষ্কার করছেন। ম্যাকডোনাল্ডস ছাড়াও কায়রোর অন্যান্য পশ্চিমা ফাস্টফুড চেইনের শাখাগুলোও এখন খালি পড়ে থাকছে বলে জানান এই প্রতিনিধি।
কুয়েতে গত বুধবার সন্ধ্যায় স্টারবাকস, ম্যাকডোনাল্ডস ও কেএফসির সাতটি শাখায় গিয়েছিলেন রয়টার্সের আরেকজন প্রতিনিধি। তিনি সব শাখাই প্রায় খালি পেয়েছেন।
মরক্কোর রাজধানী রাবাতে অবস্থিত স্টারবাকসের এক কর্মী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে তাদের কাস্টমারের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।
জর্ডানের রাজধানী আম্মানের একটি বড় সুপারশপের ক্যাশিয়ার আহমাদ আল-জারো বলেছেন, কেউ এখন পশ্চিমা পণ্য কিনছেন না। এগুলোর বদলে সবাই স্থানীয় পণ্য কিনছেন।
গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ ও অমানবিক হামলার প্রতিবাদে ভারতের কিছু মুসলিম দোকানদার ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের জনগণের সমর্থনে ভারতের কিছু মুসলিম দোকানদার ইসরায়েলি এবং মার্কিন পণ্য মজুদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক ভারতীয় দোকানদার বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়ার করার ক্ষমতা আমাদের নেই, তবে তাদের পণ্য বয়কট করে ফিলিস্তিনে তাদের কার্যক্রমকে আমরা বিরোধীতা করছি। কোকাকোলা ও পেপসির মতো ইসরায়েলি পণ্য আমরা এখন আর দোকানে রাখছি না।
যেসব ব্র্যান্ডের পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মূলত ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ফিলিস্তিনিদের পক্ষে পোস্ট দেওয়ায় নিজেদের ইউনিয়ন কর্মীদের শোকজ করেছিল স্টারবাকস। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ম্যাকডোনাল্ডসের ইসরায়েলি শাখা।
তবে বিক্রি কমে যাওয়ায় ম্যাকডোনাল্ডস ও স্টারবাকস আলাদা বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের অবস্থান নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এই বয়কট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে আরব বিশ্বের বাইরেও। মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় ম্যাকডোনাল্ডসের বিক্রি ২০ শতাংশ কমেছে বলে জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার ম্যাকডোনাল্ডস বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য সাহায্য পাঠাবে। তবে এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
বস্তুত পণ্য বয়কটের মাধ্যমে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন মুসলমানরা। তারা বলছেন, গাজায় নির্বিচারে নারী-শিশু ও নিরপরাধ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েল এবং তাদের সমর্থনকারী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং তাদের পণ্য বয়কট করা- প্রতিবাদের একটি উত্তম ও কার্যকর পন্থা। মুসলমান হিসেবে ঈমানি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে আমরা এটা করছি।